এই সপ্তাহের শুরুতে একটি প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে যে, চিনে এঁটুলি পোকাবাহিত ভাইরাস আবার ফিরে এসেছে এবং তার সংক্রমণে সাতজন মারা গেছেন ও ৬০ জন অসুস্থ। একদিকে ক্রমশ যখন বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর অতিমারিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তখন চিনে বিগত কয়েক মাসে দেখা দিয়েছে হান্টাভাইরাস, বিউবনিক প্লেগ, সোয়াইন ফ্লুর জি-৪ স্ট্রেন এবং নবতম সংযোজন এই এঁটুলি পোকার ভাইরাস।
২০২০ জুড়েই সে দেশের পূর্বের রাজ্যগুলিতে এই সব ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই বছরের প্রথম ভাগে, জিয়াঙ্গসুতে ৩৭টি সংক্রমণের ঘটনার কথা জানা যায়। পরের দিকে ২৩টি সংক্রমণের খবর আসে আনহুই রাজ্য থেকে। চিনা সংবাদ মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়। কিন্তু ভাইরোলজিস্টদের মতে, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, এ কথা বলা হয়েছে 'গ্লোবাল টাইমস'-এর এক প্রতিবেদনে।
এঁটুলি পোকাবাহিত ভাইরাসটির নাম হল, 'সিভিয়ার ফিভার থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া সিন্ড্রোম' (এসএফটিএস)। এই ভাইরাস রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। সেটি প্রথম দেখা যায় ২০০৯ সালে, চিনের হুবেই ও হেনান রাজ্যে। এখনকার কোভিড-১৯ অতিমারিও ডিসেম্বর ২০১৯-এ শুরু হয় হুবেই রাজ্যে। চিনের প্রতিবেশি দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ওই পোকাবাহিত ভাইরাস প্রথম দেখা যায় যথাক্রমে ২০১২ ও ২০১৩ সালে।
কৃষক, বনকর্মী ও শিকারিদের মধ্যে ওই ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, ওই ভাইরাস ছড়ায় যেসব প্রাণী, তাদের মধ্যে আছে ছাগল, গরু, ঘোড়া, এবং কিছু ক্ষেত্রে বেড়াল ও কুকুর।
উৎস
সার্স কোভ-২-এর মতোই এই ভাইরাসের উৎস এখনও জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি 'বানয়া' পরিবারভূক্ত ভাইরাস। বৈজ্ঞানিক ভাবে জানা গেছে যে, যে সব প্রাণীরা বাড়িতে বা খামারে থাকে, তাদের শরীরের এঁটুলি পোকা ওই ভাইরাস বহন করে। 'হেমাফিসালিস লঙ্গিকরনিস'-র (এশীয় এঁটুলি পোকা) কামড়ের মাধ্যমেই প্রধানত এই ভাইরাস ছড়ায়। তবে সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলেও একজন আক্রান্ত হতে পারে। মনে করা হয়, ভাইরাসটি রক্ত ও সর্দির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়।
উপসর্গ
উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর আর পেটের অসুখ। গবেষণায় দেখা গেছে, ওই ভাইরাস প্লেটলেট ও শ্বেত কণিকার সংখ্যা কমিয়ে দেয়। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শ্বেত কণিকাই।
মৃত্যু হার
চিনে এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুহার ৬-৩০%। সময়ের সঙ্গে এই হার ১০-১৬ শতাংশয় নেমে এসেছে। পার্শ্ববর্তী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার ৩২-৪৭%। ২০১৭ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অসুখকে তাঁদের গুরুত্বের তালিকায় ৮ নম্বর স্থানে রেখেছিলেন। পরের বছর সেটির গুরুত্ব একটু কমিয়ে ৯-এ রাখা হয়।
চিকিৎসা
এই আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন তৈরি করার কাজ চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু তা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। চিনে 'রিবাভারিন' নামের একটি ওষুধ ব্যবহার করা হয় ভাইরাসটিকে প্রতিহত করতে। কিন্তু দেখা যায়, সেটি রোগীর প্লেটলেট সংখ্যা বাড়াতে বা রোগীর শরীরে ভাইরাসের চাপ কমাতে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া, 'সেরোপেভালেন্স' পরীক্ষা করে প্লাজমা থেরাপি করেও আশাব্যাঞ্জক ফল পাওয়া যায়নি।