ভারত কোভিড-১৯ টিকা কী ভাবে দেওয়া হবে, তার পরিকল্পনা আলোচনা করার পর, এবং অগ্রাধিকারের তালিকা প্রকাশ করার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, ৯৩ লক্ষ ভারতীয় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হবে কি না। ভারতে ৩০ কোটি নাগরিককে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা হয়েছে। যাঁরা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি।
এই কথা সত্য যে, যাঁরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শরীরে সার্স-কোভ-২'র বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু তার ফলে যে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়, তা কত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে, তা নিয়ে বিতর্ক এবং পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। যদিও সংখ্যায় খুব কম, তবুও গোটা দুনিয়াতেই পুনঃসংক্রমণের ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। সার্স-কোভ-২'র প্রোটিন স্পাইকে ডি৬১৪জি জিনের মিউটেশনের ফলে রিইনফেকশন বা পুনঃসংক্রমণ ঘটছে।
১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের ডিরেক্টর বলরাম ভার্গভ একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, যাঁরা ইতিমধ্যে কোভিড-১৯'এ সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁরাও টিকা নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ছড়াল মাছের ডিমে নিমাটোডস সংক্রমণের পুরনো ছবি
ভার্গভ বলেন, "এই ধরনের মানুষদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্নের সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। প্রথমত, যাঁর শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি রয়েছে, তাঁকে টিকা দিলে তাঁর শরীরে টিকা-সংক্রান্ত কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে কি না। দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবডি আছে ধরে নিয়ে টিকা না দেওয়া হলে আমাদের টিকা ডোজ ঠিক ভাবে ব্যবহৃত হবে কি?"
যাঁরা ইতিমধ্যে সংক্রমিত, তাঁদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত কোনও নির্দেশ দেয়নি।
আগেই যাঁরা সংক্রমিত, তাঁদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন মত পোষণ করছেন
ইনসাইড সায়েন্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার থেকে টিকা বেশি কার্যকর হতে পারে। সারা বিশ্ব জুড়ে যে গবেষণা চলছে, তাতে মেমরি বি সেলস এবং কিলার টি সেলসের বিভিন্ন ধরন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এগুলি আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য দায়ী। বি সেলস আগের সংক্রমণ হিসাবে সার্স-কোভ-২কে শনাক্ত করে এবং তার পর টি সেলস প্যাথজেনের উপর কাজ করে।
যেহেতু কোভিড-১৯ ভাইরাস চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন, তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিন কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সারা বিশ্ব থেকেই পুনঃসংক্রমনের ঘটনার কথা জানা গেছে।
যাঁরা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত।
পুনের আইআইএসইআর'র প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ ডঃ বিনীতা বাল জানিয়েছেন, "যদি এটি অতিমারির পরিস্থিতি না হত, এবং টিকার পরিমাণ যদি সীমিত না হত, তবে আমি বলতাম যে, যাঁরা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদেরও টিকা দেওয়া হোক। তত্ত্বগত ভাবে, ইতিমধ্যে সংক্রমিতদের টিকা দিলে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু টিকা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জোগানের ঘাটতিও দেখা দেবে।"
বিনীতা বাল আরও জানিয়েছেন যে, মাস ছয়েক পরে যখন টিকার জোগান স্বাভাবিক স্তরে পৌঁছাবে, তখন আগে সংক্রমিত কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তত দিন পর্যন্ত তাঁদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নীচের দিকে রাখতে হবে।
অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অব বায়োসায়েন্সের ডিরেক্টর এবং ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. শাহীদ জামিল অবশ্য বিষয়টিকে অন্য রকম ভাবে দেখছেন। তিনি মনে করছেন যে, স্বাভাবিক সংক্রমণের চেয়ে টিকাতে বেশি কার্যকরী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। ড. জামিল বললেন, "যেহেতু বেশির ভাগ আক্রান্ত অ্যাসিম্পটম্যাটিক, সুতরাং কারা আক্রান্ত হয়েছেন, পরীক্ষার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা খরচসাপেক্ষ, এবং ঝক্কিবহুল। তা করার কোনও মানে হয় না। যাঁরা টিকা পাওয়ার উপযুক্ত, তাঁদের সবাইকে অগ্রাধিকার অনুসারে টিকা দেওয়া উচিত।"
এখন পর্যন্ত যত টিকা নিয়ে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে একমাত্র সার্ভিকাল ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান পপিলমা ভাইরাসের ক্ষেত্রেই টিকা স্বাভাবিক সংক্রমণের চেয়ে ভাল প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভেনশন দেখেছে, সংক্রমিত হওয়ার দু মাস পর্যন্ত সেরাম অ্যান্টিবডি থাকতে পারে। অ্যান্টিবডির দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকরী প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ টিকা ডিএনএ'র গঠন বদলাবে? ক্রিস্টিয়ান নর্থরাপের ৫ টি ভুল দাবি