অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী সুপ্রিম কোর্টে একটি অতিরিক্ত আর্জি পেশ করে অভিযোগ করেছেন যে, সংবাদ মাধ্যম তাঁর বিচার করতে নেমেছে। এর আগে তিনি একটি আর্জি পেশ করে অভিনেতা সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যু তদন্ত বিহার থেকে মুম্বাইয়ে সরিয়ে আনার আবেদন করেন।
"বিষয়টিকে সংবাদ মাধ্যম ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে। খবরের চ্যানেলগুলি এই কেসের সাক্ষীদের জেরা করছে। সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হওয়ার আগেই সংবাদ মাধ্যম আবেদনকারীকে দোষী সাব্যস্ত করছে ... ঠিক যেমন ভাবে ২-জি ও তালওয়ারদের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের মিডিয়া দোষী সাব্যস্ত করেছিল এবং তাঁদের সকলেই পরে কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হন," রিয়া চক্রবর্তী বলেছেন তাঁর আবেদনে।
চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন যে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এই কেসে তাঁকে "বলির পাঁঠা" করা হচ্ছে। কারণ, অভিনেতা আশুতোষ ভাক্রে ও সমীর শর্মাও আত্মহত্যা করেছেন, কিন্তু তাঁদের মৃত্যুকে ঘিরে "ক্ষমতার অলিন্দে ওই সংক্রান্ত (স্বজনপোষণ) কোনও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে না।
দু'মাস আগে আত্মহত্যার মাধ্যমে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনাবসান হলেও তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। ১৪ জুন 'ছিচোর' ছবির ৩৪ বছর বয়সী ওই অভিনেতাকে মুম্বাইয়ের ব্যান্ড্রায় তাঁর ভাড়া-নেওয়া ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবরে বলা হচ্ছে, তিনি অবসাদে ভুগছিলেন, কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বজনপোষণের কথাও লোকমুখে ফিরছে।
সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে প্রথম শুনানি হয় ৫ অগস্ট। তখন মুম্বাই পুলিশ ঘটনাটির সব দিক খতিয়ে দেখেছে কিনা সে বিষয়ে কোর্ট জানতে চায়। বিহার পুলিশের এক তদন্তকারী অফিসারকে মুম্বাইতে নিভৃতবাসে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য মুম্বাই পুলিশকে তিরস্কারও করেন কোর্ট। ১১ অগস্ট আবার শুনানি হবে।
সুপ্রিম কোর্টে কী নিয়ে শুনানি হচ্ছে
২৫ জুলাই, সুশান্ত সিংয়ের বাবা কৃষ্ণ কিশোর সিং পাটনায় একটি এফআইআর করেন। তাতে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ করেন তিনি। তার মধ্যে ছিল আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি, এবং ইন্ডিয়ান মেন্টাল হেল্থ অ্যাক্ট বা ভারতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইনের আওতায় অভিযোগ। ওই এফআইআর-এ চক্রবর্তীর পরিবারকেও অভিযুক্তদের তালিকায় রাখা হয়।
২৮ জুলাই, তদন্তটি পাটনা থেকে মুম্বাইয়ে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য অভিনেত্রী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। উনি অভিযোগ করেন যে, তাঁকে মিথ্যে ভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা ও বিহার রাজ্যে যোগসাজসে সাজানো হয়েছে। তাঁর আর্জিতে চক্রবর্তী আরও বলেন যে, "তাঁকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এবং যিনি মারা গেছেন তাঁকে হারিয়ে উনি এমনিতেই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছেন, আর তার ওপর সংবাদ মাধ্যমের আচরণ তাঁর বিড়ম্বনা আরও অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে"।
এর কিছু দিনের মধ্যেই বিহার ও মুম্বাই পুলিশ এই মামলায় কাভিয়াট দাখিল করে। তার অর্থাৎ হল, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোর্ট যেন তাদের বক্তব্য শোনে। ৫ অগস্ট, প্রথমবার মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে, কেন্দ্রীয় সরকারও এই মামলায় একজন পার্টি হওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। কেন্দ্রের আইনজীবী সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন বিহার সরকারের তোলা সিবিআই তদন্তের দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিয়েছে।
মুম্বাই ও বিহার পুলিশ, কেন্দ্রীয় সরকার, রিয়া চক্রবর্তী ও সুশান্ত সিং রাজপুতের পরিবার, সব পক্ষকেই তাঁদের মতামত জানানোর জন্য সময় দেন কোর্ট।
বিহার পুলিশ কী বলছেন
বিহার পুলিশ তাঁদের হলফনামায় বলেন, মামলাটি সিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই রুজু করা হয়। হলফনামায় বলা হয়, সিং অভিযোগ করেন যে, রাজপুতের "কষ্টার্জিত টাকা" "আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য নিয়েই" ২০১৯-এ চক্রবর্তী রাজপুতের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর অভিযোগে সিং বলেন, তাঁর ছেলের জীবনের সব বিষয়েই চক্রবর্তী "নাক গলাতেন" ও প্রয়াত অভিনেতাকে বোঝাতেন যে তিনি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন এবং তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন"। সিং আরও অভিযোগ করেন যে, রাজপুতকে "বেশি মাত্রায়" অসুধ খাওয়ানো হয়, তাঁকে তাঁর পরিবারের লোকজন থেকে বিছিন্ন করা হচ্ছিল, এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে ১৭ কোটি টাকা ছিল, তার মধ্যে ১৫ কোটি টাকা "রাজপুতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন সব ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে সরানো হয়"।
মামলাটি স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে বিহার পুশি অভিযোগ করে যে, তদন্তের ক্ষেত্রে মুম্বাই পুলিশ সহযোগিতা করছেন না। তাঁরা অভিনেত্রীর পক্ষ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করে বিহার পুলিশ। তাঁরা আরও বলেন, বিহার পুলিশের একজন তদন্তকারী অফিসারকে নিভৃতবাসে পাঠিয়ে দেওয়াটা, "মুম্বাই পুলিশের তরফ থেকে পাটনা পুলিশের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার জন্য ভেবেচিন্তেই নেওয়া এক পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়"।
মুম্বাই পুলিশ কী বলছে
মুম্বাই পুলিশ দাবি করেছে যে বিহারে চালু-করা মামলাটি "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত"। তদন্তটি সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে মুম্বাই পুলিশ সুপ্রিম কোর্টকে বলে যে, কেসটি "অশোভন তৎপরতার" সঙ্গে নখিভুক্ত করা হয়।
মুম্বাই পুলিশের হলফনামায় আরও বলা হয়, তদন্তটি সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে কোনও যুক্তি নেই। এবং রাজপুতের বাবার অভিযোগগুলি পরে ভেবেচিন্তে সাজানো হয়েছে।