শ্রীলঙ্কার পুলিশ, ২০১৮ সালে বোরখা পরা এক ব্যক্তিকে ধরেছিল। সেই ঘটনার ভিডিও এখন এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, এপ্রিল ১৯, ২০১৯ তারিখে শ্রীলঙ্কায় একাধিক বোমা বিস্ফোরনের পর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দাবিটি মিথ্যে।
শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে ইসলামিক জঙ্গি দ্বারা সংগঠিত সিরিয়াল বোমা হমলায় ৩৫০-এরও বেশি মানুষ মারা যান। এখনও পর্যন্ত সেটাই ওই দ্বীপে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসি হামলা। শ্রীলঙ্কা বলেছে যে, ইসলামিক গোষ্ঠী ন্যাশানাল তৌহিদ জামাত ওই হামলা চালায়। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ইসলামি স্টেট ওই আক্রমণের দায় স্বীকার করে।
বিভ্রান্তিকর মেসেজটি হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ওই ভাইরাল মেসেজে বলা হয়েছে, “মুসলমান মহিলা সেজে থাকা এক বৌদ্ধকে শ্রীলঙ্কার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সে ওই শয়তানদের একজন যারা শ্রীলঙ্কার গির্জায় আক্রমণ চালায়।”
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি লোককে পুলিশ ঘিরে ধরেছে আর সে তার গায়ের বোরখা খুলছে। লোকটিকে সাদা অন্তরবাস পরে থাকতেও দেখা যাচ্ছে।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) মেসেজটি আসে। ফেসবুকে সার্চ করে দেখা যায় সেটি ভাইরাল হয়েছে।
‘হায়দ্রাবাদ শিয়াসাত’ নামের এক ফেসবুক পেজও একই ক্লিপ শেয়ার করে। সঙ্গে ক্যাপশানে লেখা হয়, “মুসলমান মহিলার বেশে এক বৌদ্ধ লোককে গ্রেপ্তার করে শ্রী লঙ্কার পুলিশ। যে শয়তানগুলি শ্রীলঙ্কায় গির্জায় হামলা চালায়, সে হল তাদেরই একজন। তা সত্ত্বেও কেন সব সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য মুসলমান নামধারি অজ্ঞাত সব সংগঠন দায় স্বীকার করে?”
পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। পোস্টটি এখানে আর্কাইভ করা আছে।
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত, পোস্টটি ১৯,০০০ ভিউ পেয়েছিল, আর শেয়ার করা হয়েছিল ১,৪০৪ বার।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিও বিশ্লেষণ করার সফট্ওয়্যার ইনভিড ব্যবহার করে ভিডিওটিকে ফ্রেমে-ফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে দেখা যায় যে, শ্রীলঙ্কার রেডিও স্টেশন ‘নেথ এফএম’ ভিডিওটি অগস্ট ২৯, ২০১৮ তারিখে আপলোড করেছিল।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম নেথ এফএম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, যে ক্লিপটি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটি পুরনো। কলম্বোর রাজাগিরিয়ায় ওয়েলিকাডা প্লাজা শপিং মল থেকে পুলিশ বোরখা পরা ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
নেথ এফএম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী লোকটি একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে ছুরি মেরে খুন করতে যাচ্ছিল যখন পুলিশ তাকে ওই শপিং মলের কাছে গ্রেপ্তার করে। একটি ঋণ সংক্রান্ত বিবাদের কারণে সে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে মারবে ঠিক করেছিল
তার সন্দেহজনক আচরণের কারণে পুলিশকে কেউ একজন খবর দিয়ে সতর্ক করেছিল।
রিপোর্টটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিটির পরিচয় স্পষ্ট নয়। লোকটি গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ স্টেশনে ঘটনাটির ভিডিও তোলা হয়।