Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
ফ্যাক্ট চেক

'সরকারী তথ্যসূত্র' বলে অমর্ত্য সেনকে নিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সম্পাদকের অসত্য ট্যুইট

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অপব্যবহার নিয়ে একটি মিথ্যে বিবরণের হোয়াটস্অ্যাপ বার্তা ট্যুইট করেছেন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সম্পাদক, যা ভাইরাল হয়েছে।

By - Archis Chowdhury | 3 May 2019 5:33 AM GMT

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক পদস্থ সম্পাদক একটি মিথ্যে হোয়াটস্অ্যাপ বার্তা ট্যুইট করেছেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল নাকি অধ্যাপক অমর্ত্য সেন অপব্যবহার করেছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

ওই হোয়াটস্অ্যাপ বার্তাটিকে ‘খবর’ হিসাবে সঙ্গে-সঙ্গে গ্রহণ করেছে, রাইটলগ ও অপইন্ডিয়া-র মতো উল্লেখযোগ্য ওয়েবসাইট এবং অনসূল সাক্সেনার মতো প্রভাবশালী সোশাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল বুম তার হেল্পলাইন নম্বরে এই বার্তাটি দেখতে পায়, যাতে অভিযোগ করা হয়েছে, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অমর্ত্য সেন নাকি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল অপব্যবহার করেছেন।

পাঠানো হোয়াটস্‍অ্যাপ বার্তাটি

কীভাবে ভুয়ো খবর ছড়াতে হয়

এর পরেই বুম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক ভারতী জৈনের একটি ট্যুইটের খোঁজ পায়, যেটি অক্ষরে-অক্ষরে ওই হোয়াটস্‍অ্যাপ বার্তাটিকে টুকে লেখা।

ভারতী জৈনের ট্যুইটের স্ক্রিনশট

ট্যুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে

ওই কাহিনী কিছু উল্লেখযোগ্য ওয়েবসাইট যেমন স্বঘোযিত "দক্ষিনপন্থী তথ্য-যাচাইকারক" অপইন্ডিয়া এবং দক্ষিনপন্থী ওযেবসাইট রাইটলগ-এ তুলে ধরা হয়।

অপইন্ডায়ারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট। প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে

রাইটলগে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট। প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে

প্রভাবশালী সোশাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অনসুল সাক্সেনাও ফেসবুকে ওই একই বার্তা পোস্ট করেন এবং তাঁর তথ্যের উৎস হিসাবে ভারতী জৈনের ট্যুইটের উল্লেখ করেন।

নালন্দা নিয়ে অনসূল সাক্সেনার ফেসবুক পেস্টর স্ক্রিনশট। পোস্টটি আর্কািভ করা আছে এখানে

এরপরই বার্তাটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভারতী জৈনের টুইটটি ২০০০ জন পুনরায় টুইট করে এবং অনসূল সাক্সেনার ফেসবুক পেজও ৩০০০ জন শেয়ার করে।

'হোয়াট্স্যাপ এখন সরকারি সূত্র'

ভারতী জৈনের কাছে বেশ কয়েকজন জানতে চান, তাঁর টুইটের উৎস কী ? উত্তরে জৈন জানান, তিনি সরকারি সূত্র থেকে খবরটি সংগ্রহ করেছেন, যদিও আসলে তিনি একটি হোয়াট্স্যাপ বার্তা হুবহু নকল করেই তাঁর ট্যুইটটি সাজান।



একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনার জন্য একটি হোয়াটস্‍অ্যাপ বার্তাকে সরকারি সূত্র হিসাবে বর্ণনা করার কারচুপি অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ধরে ফেলার পর এখন ভারতী তাঁর অধিকাংশ ট্যুইটি মুছে দিয়েছেন।

বুম ভারতীর কাছে জানতে চায় তাঁর টুইটগুলি সহসা মুছে দেওয়ার কারণ কী ? কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

গত মার্চ মাসেই যে অনসূল সাক্সেনা ফেসবুকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, তিনিও তড়িঘড়ি তাঁর সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজটি মুছে ফেলেন।

একের পর এক অভিযোগ

হোয়াটস্অ্যাপ বার্তার দাবিগুলি ছিলঃ

১) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (যিনি তাঁর মেয়াদের অধিকাংশ সময় বিদেশেই থাকতেন) মাসে ৫ লক্ষ টাকা করে বেতন পেতেন। করমুক্ত নানাবিধ সুযোগসুবিধা, যথেচ্ছ বিদেশভ্রমণ, বিলাসবহুল হোটেলে মিটিং করা এবং যাকে খুশি অধ্যাপক পদে নিয়োগ করার অবাধ স্বাধীনতাও তাঁকে দেওয়া হয়।

২) তাঁর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭২৯ কোটি টাকা খরচ হয়।

৩) ডঃ গোপা সাবরওয়াল, ডঃ অঞ্জনা শর্মা, ডঃ নয়নজ্যোত লাহিড়ি এবং মনমোহন সিংয়ের কন্যা উপিন্দর সিং —দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চারজনকে তিনি অধ্যাপক নিয়োগ করেন।

৪) মনমোহন সিংয়ের অন্য দুই কন্যা দমন সিং এবং অমৃত সিংকেও সাম্মানিক পদে নিয়োগ করা হয়, যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই নিয়মিত প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পেতেন।

৫) ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এই প্রতারণা বন্ধ হয় এবং অমর্ত্য সেন চ্যান্সেলরের পদ থেকে বিতাড়িত হন।


তথ্য যাচাই

১. অমর্ত্য সেন পান ৫ লক্ষ টাকা বেতন, কর-মুক্ত সুবিধা, বেহিসেবি বিদেশ ভ্রমন, বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক, সরাসরি নিয়েগের ক্ষমতা।

অমর্ত্য সেনের বেতন ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় ২০১৫ সালে যখন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে তর্কে নামেন।

দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে স্বামীর অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা আখ্যা দিয়ে জবাব দেওয়া হয়, অমর্ত্য সেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসাবে এক পয়সাও বেতন নেন না, তাঁর পদটি সম্পূর্ণ সাম্মানিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আরও জানানো হয়, অমর্ত্য সেন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্রি পাশ পেয়েছেন, যা তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির গৌরবকে সম্মানিত করতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীই দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্কই নেই।

বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চালানো হচ্ছে

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চ্যান্সেলর পদটি সাম্মানিক, কোনও প্রশাসনিক দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয় না। নলন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে চ্যান্সেলর নন, ভাইস-চ্যান্সেলরই হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক অফিসার।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের স্ক্রিনশট।

সুতরাং, কোনও অবস্থাতেই অমর্ত্য সেনের উপর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব বর্তানো হয়নি।

বুম এ ব্যাপারে অমর্ত্য সেনের থেকে মতামত জানতে চেয়েছে, তা জানা গেলেই প্রতিবেদনটি সংস্কারন করা হবে।

২) ২৭২৯ কোটি টাকা খরচ করানো।

২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল পররাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভি কে সিং জানান, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট ২৭২৭ কোটি টাকা সরকার মঞ্জুর করলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৪৭ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২৭২৯ কোটি টাকার গল্পটি অতএব সম্পূর্ণ অবাস্তব।

৩) ডঃ গোপা সাবরওয়াল, ডঃ অঞ্জনা মিশ্র, নয়নজ্যোত লাহিড়ি এবং উপিন্দর সিংকে অধ্যাপক নিয়োগ।

বুম জেনেছে, গোপা সাবরওয়ালই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এবং অঞ্জনা মিশ্র ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডিন । আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে লাহিড়ি কিংবা উপিন্দর সিংয়ের নামোল্লেখই নেই।

বুম লাহিড়ির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেনঃ “নালন্দায় কোনও পদের জন্য আমি কখনও আবেদনও করিনি আর সেখানে কখনও পড়াতেও যাইনি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কখনও একটি পয়সাও আমি পাইনি।”
বুম উপিন্দর সিংয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। তাঁর জবাব পেলেই প্রতিবেদনটি পরিমার্জন করা হবে।

৪) দুই মনমোহন-কন্যা দমন সিং ও অমৃত সিংয়ের সাম্মানিক অধ্যাপক পদে নিয়োগ।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই দুই ব্যক্তিরও কোনও উল্লেখই নেই। তার বাইরেও এমন কোনও রিপোর্ট নেই, যা থেকে তাঁদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে।

দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের সিনিয়র সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার ভারতী জৈনের তোলা অভিযোগের জবাবে একটি টুইটে জানিয়েছেন, তিনি কোথাও এই দুই মনমোহন-কন্যার নালন্দার সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ খুঁজে পাননি। ওই দুই বোনের মধ্যে একজন মার্কিন মুলুকে বসবাস করেন বলে ভাইরাল হওয়া বার্তায় যা বলা হয়েছিল, তাও ভিত্তিহীন, ভুয়ো।



দমন সিংয়ের কাছেও বুম প্রতিক্রিয়া চেয়েছে, তাঁর জবাব পাওয়া গলে প্রতিবেদনটি পরিমার্জন করা হবে।

৫) ২০১৪-র পর মোদী ক্ষমতায় আসতেই এ সব জালিয়াতি বন্ধ হয় এবং অমর্ত্য সেন নালন্দা থেকে বিতাড়িত হন।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী চ্যান্সেলর পদে অধ্যাপক সেনের মেয়াদ ৩ বছর পরেই শেষ হয়। দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অধ্যাপক সেন জানান, তাঁর মেয়াদ আরও ৩ বছর সম্প্রসারিত করতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তিনি নিজেই চাননি এই মেয়াদবৃদ্ধি, কেননা তিনি অনুভব করছিলেন, তদানীন্তন সরকার চাইছিল, তিনি এবার চ্যান্সেলর পদ ছেড়ে দিন।

২০১৫ সালের ১৩ অগস্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে জানান, “অধ্যাপক সেন প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে ২০১৫-র জুলাইয়ের পর তাঁকে যেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদের জন্য পুনর্বিবেচনা করা না হয়।”


২০১৫ সালের ১৩ অগস্ট রাজ্যসভায় পেশ করা পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ভিকে সিং-এর বিবৃতি।

অতঃপর, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, হোয়াটস্অ্যাপ বার্তায় ছড়ানো ভুয়ো খবরটির ফাঁক-ফোকড়গুলি বেশ বড়ই এবং তাতে তার বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারেই হ্রাস পায়।

কিন্তু ভারতী জৈনের মতো একজন দায়িত্বশীল সম্পাদকের টুইটে এমন ভুয়ো বার্তাকে সরকারি সূত্রের খবর বলে চালানোর ফলে অনেকেই এটিকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন এবং দেখতে-দেখতে বার্তাটি ভাইরাল হয়ে যায়।

ট্যুইটারে একের পর এক প্রত্যাঘাত খাওয়ার পর শ্রীমতী জৈন অবশেষে ডঃ অমর্ত্য সেন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভুয়ো বার্তাকে সরকারি সংবাদসূত্র বলে চালানোর জন্য মার্জনা চেয়েছেন।



Related Stories