কোভিড-১৯ অতিমারির (COVID 19 Pandemic) প্রকোপের সূচনা এবং সুশান্ত সিং রাজপুতের (Sushant Singh Rajput) আত্মহত্যার পরে যেমনটা হয়েছিল, একই ভাবে কৃষি সংস্কার আইনের (Farm Reform Laws) বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদ (Farmers Protest) আন্দোলনও তেমনই সত্যি খবর ও ভুয়ো খবরের দুনিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২০২১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বুম কৃষক আন্দোলন বিষয়ক অন্তত ১০১টি খবরের তথ্য যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, অন্তত ৩৫ শতাংশ তথ্য-যাচাইয়ে কৃষক বিক্ষোভ সংক্রান্ত খবর ভুয়ো প্রতিপন্ন হয়েছে। তার মধ্যে আবার ৫৭ শতাংশ খবর বা ছবি ব্যবহৃত হয়েছে প্রতিবাদী কৃষকদের খলনায়ক হিসাবে চিত্রিত করতে, আর ৪৩ শতাংশ খবরে তাদের নায়ক হিসাবে দেখানো হয়েছে।
এই সময়পর্বে অন্যান্য জনপ্রিয় বিষয়গুলো হল রাজনীতি (১৫ শতাংশ), কৃষক (১০ শতাংশ), বিচ্ছিন্নতাবাদ (১০ শতাংশ), ৮ শতাংশ হল মুসলিম ও শিখদের সম্পর্কে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রচারিত ভুয়ো তথ্য, আর বাকি ৮ শতাংশ হল পুলিশ ও তার দমননীতি বিষয়ক ভুয়ো তথ্য।
ভুয়ো খবরের রকমফের
আমরা এই তথ্য-যাচাইগুলিকে ফার্স্ট ড্রাফ্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা
ক্লেয়ার ওয়ার্ডলে-র সুপারিশ অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করেছি: ভুয়ো সংযোগ, ভুয়ো প্রেক্ষিত, ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য, বিপথগামী তথ্য, সম্পূর্ণ বানানো তথ্য, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক তথ্য, প্যারডি ইত্যাদি, ইত্যাদিl
আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ (৭৪ শতাংশ)যাচাই করা খবরগুলো সঠিক, কিন্তু তাদের প্রেক্ষিতটা ভুয়োl ৯ শতাংশ যাচাইয়ের তথ্য পুরো বানানো, ৮ শতাংশ যাচাইয়ের তথ্য বিভ্রান্তিকর, আর ৬ শতাংশ তথ্য মিডিয়াকে বিকৃত করে তৈরি করাl
সবচেয়ে জনপ্রিয় (৬২.৫ শতাংশ) ভুয়ো খবর ছবির ভিত্তিতে তৈরি আর ৩৩ শতাংশের ভিত্তি ভিডিও ক্লিপল
প্রতিবাদী কৃষকরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদই থেকেছে এই সব ভুয়ো খবরের প্রধান উপজীব্য, যেখানে সম্পর্কহীন ছবি ও ভিডিও জুড়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের লোকচক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছেl পূর্বোল্লিখিত সময়পর্বে আমাদের যাচাই করা তথ্যগুলির ৩৮ শতাংশই এই রকমl
এগুলিতে পুরনো সব ছবি ব্যবহার করে কৃষক আন্দোলনকারীদের খলনায়ক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে কিংবা তাদের উপর খলিস্তানি জঙ্গির তকমা সাঁটার চেষ্টা হয়েছেল
যাচাই করা এই সব ভিডিওগুলির ৭৪ শতাংশই প্রসঙ্গ-বহির্ভূত।
আন্দোলনকারী: খারাপ, কৃষক: ভাল, প্রতিষ্ঠান: খারাপ
আমরা আমাদের যাচাই করা তথ্যগুলিকে আর একভাবেও শ্রেণিবিভাজন করেছি, যাতে প্রতিবাদীদের, কৃষকদের এবং কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে ভালো, মন্দ কিংবা মানবিক বা খল, এইভাবে ভাগ করা হয়েছেl কাউকে অনুকূল আলোয় দেখানো হয়েছে, কারও ওপর নেতিবাচক আলো পড়েছে।
এ ধরনের ৩৫টি যাচাই করা তথ্যের মধ্যে ২০টিতে প্রতিবাদীদের হিংস্র অবমানব হিসাবে দেখানো হয়েছে আর ১৫টিতে ভালোমানুষ হিসাবে।
আবার ভুল তথ্য পরিবেশনকারী ১০টি খবরের মধ্যে ৯টিতেই কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ব্যক্ত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে নিশানা করে যে সব ভুয়ো খবর প্রচারিত হয়েছে, তার বেশির ভাগই নেতিবাচক বা সমালোচনামূলক। এ ধরনের ৮ টি খবরের মধ্যে ৬ টিই দিল্লি পুলিশের নৃশংসতা দেখাতে ব্যবহৃত সম্পর্কহীন ভিডিও।
সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচারিত ৬টি খবরের মধ্যে ৪টিতেই তথ্য-যাচাইয়ে নেতিবাচক ভূমিকা উঠে এসেছে। আর গৌতম আদানি বা মুকেশ অম্বানি বিষয়ক যে ৪টি খবরের তথ্য আমরা যাচাই করি, সেগুলিতেও তাদের খলনায়ক রূপেই চিত্রিত করা হয়েছে।