বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো মরশুমে করোনা অতিমরি সংক্রমণে রাশ টানতে সোমবার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্ট ওই রায়ে দর্শকদের পুজো মন্ডপে প্রবেশের উপর নিষেধাঞ্জা জারি করেছে।
করোনা রোগীর সংখ্য দিনে দিনে বাড়ছে আর রাজ্য সরকার পুজোর আগের মতই পুজোর অনুমতি দিচ্ছে এব্যাপারে জনস্বার্থ মমলা করেন আইনজীবী সৌরভ চট্টেপাধ্যায়। তাঁর হয়ে আদালতে সাওয়াল করে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
করোনাকালে পু়জো ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে লাগাম চেয়ে কলকাতা হাইকোর্ট আরেকটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন অজয়কুমার দে নামে হাওড়ার এক বাসিন্দা। রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত সরকারের সদিচ্ছা ও তৎপরতার কথা উল্লেখ করেন।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ব্যাপারে লক্ষীপুজোর পরে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মালদহে নমাজের সময় পুজো মন্ডপের মাইক বন্ধের পুরনো চিঠি ভাইরাল
রায়-এর বিশেষ দিকগুলি
- মন্ডপে দর্শকের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
- বড় প্যান্ডেলের ক্ষেত্রে ১০ মিটার ও ছোট মন্ডপের ক্ষেত্রে ৫ মিটারে মধ্যে ব্যরিকেড দিয়ে নো এন্ট্রি জোন ঘোষণা করতে হবে।
- বড় প্যান্ডেলের ক্ষেত্রে ১০ মিটার ও ছোট মন্ডপের ক্ষেত্রে ৫ মিটার দূরত্ব থেকে দর্শকের প্রতিমা দর্শন করতে হবে।
- বড় পুজোর ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ জন পুরুত সহ কর্মকর্তারা প্যান্ডেলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। ছোট পুজোর ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ১৫।
- সেই পুজো উদ্যোগতাদের নামের তালিকা আগে থেকে বাইরে টাঙিয়ে দিতে হবে। পরে সেই নামের বদল করা যাবে না।
- কলকাতা পুলিশের ম্যানুয়ালে থাকা সব পুজো বড় পুজো হিসেবে বিবেচিত হবে। বাকীটা বিবেচনা করবে পুলিশ।
দেবীপক্ষের তৃতীয়ায় এই রায় অনেকে সময়োচিত পদক্ষেপ ভাবলেও পুজো উদ্যোগতাদের সংগঠনগুলির অনেকেই বেশ অখুশি। অনেকে আবার দুষছেন কলকাতার কয়েকটি বড় পুজো মন্ডপকে। যার বেলাগাম ভিড়ের ছবি সোশাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে শেয়ার হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন অনেকে।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "অর্ডারের কপি হাতে পেয়েছি। ফের আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি।" এই সংগঠন সহ আরও কয়েকটি পুজো কমিটি আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার বিষয়টি মঙ্গলবার জনাতে পারে বলে আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আইনজীবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় ফোরাম ফর দুর্গোৎসব। বুধবার এই আবেদনের শুনানিতে একই রায় বহাল রাখলেন বিচারপতিরা। সিঁদুর খেলার অনুমতি দেওয়া হল না। 'করোনা বিধি মেনে নো এন্ট্রি জোনে ঢাকিরা থাকতে পারবেন,' জানিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন: পুজোতে বিকেল থেকে রাত-ভোর কার্ফু? রাজ্য পুলিশ খণ্ডন করল ভুয়ো বার্তা