ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড বা আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার-এর অনুমান যে, এ বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের মাথাপিছু জিডিপি-কে সামান্য হলেও ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু আগামী বছর তা আবার কমে যাবে। অনুমান করা হচ্ছে যে, এ বছর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১,৮৭৬.৫৩ মার্কিন ডলার (বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার = ৭৩.৪৪ ভারতীয় টাকা) এবং বাংলাদেশের ১,৮৮৮ মার্কিন ডলার। এর কারণ হল, চলতি ২০২০-২০২১ (এফওয়াই ২১) আর্থিক বছরে ভারতীয় অর্থনীতির ১০.৩% সঙ্কোচন। অক্টোবর মসে প্রকাশিত 'আ লঙ্গ অ্যান্ড ডিফিকাল্ট অ্যাসেন্ট' শিরোনামের 'ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক'-এ এমনই মন্তব্য করেছে আইএমএফ। এই নিয়ে আইএমএফ হল তৃতীয় বড় সংস্থা যারা ভারতের ক্ষেত্রে দুই সংখ্যার সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দিল।
মাথা পিছু জিডিপির মানে কি?
মাথাপিছু জিডিপির অর্থ হল, একটি দেশের অর্থনীতিতে একজন ব্যক্তি কতটা উপার্জন করতে পারেন, তার হিসেব। একটি দেশের বার্ষিক বা বিভিন্ন সময়ে জিডিপির পরিমাণকে সেই দেশের জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে, মাথাপিছু জিডিপির হিসেবটা পাওয়া যায়। (পড়ুন এখানে)।
এর আগে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়ে ছিল যে, ভারতের অর্থনীতির ৯.৬% সঙ্কোচন হতে পারে। আর ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে সঙ্কোচনের হার ৯.৫% হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বছর মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে
ভারতের অর্থনীতি যদি সঙ্কুচিত হয়, তাহলে মাথাপিছু জিডিপিও কমবে।
২০১৯-এ (এফওয়াই ২০) ভারতে মাথাপিছু আয় ছিল ২,০৯৭.৭৮ মার্কিন ডলার। কিন্তু আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই আর্থিক বছরে, জিডিপির সামগ্রিক সঙ্কোচনের ফলে, মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়াবে ১.৮৭৬.৫৩ মার্কিন ডলার। আর অনুমান করা হচ্ছে, এই আর্থিক বছরে (এফওয়াই ২১), বাংলাদেশের জিডিপি বাড়বে ৩.২% হারে (সে দেশের আর্থিক বছর জুলাই থেকে জুন ধরা হয়)।
২০১৯-এ (এফওয়াই ২০) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১,৮১৬.০৪ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ বছর (এফওয়াই ২১) সেই আয় ১,৮৮৭.৯৭ মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারতের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে তা হবে ১১.৪৪ মার্কিন ডলার বেশি।
অন্যদিকে, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশিই থাকবে, আর নেপালের, ভারতের চেয়ে নীচে। ২০২০ ও তার পরে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি কী হবে, আইএমএফ-এর রিপোর্টে তা বলা হয়নি। ২০১৯-এ তা ছিল ১,৩৪৯ মার্কিন ডলার।
তথ্য দেখাচ্ছে যে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের মাথাপিছু জিডিপিকে ছাড়িয়ে যাওয়াটা সাময়িক। আইএমএফ-এর অনুমান, এফওয়াই ২২-এ ৮.৮ শতাংশে থাকা ভারত ৪.৪ শতাংশে থাকা বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাবে। ভারতের মাথাপিছু আয়, ১০১৯-এর (এফওয়াই ২০) জায়গায় পৌঁছে ২,০৩০ মার্কিন ডলারের একটু বেশি হবে। এবং তা হবে বাংলাদেশের ১,৯৯০ মার্কিন ডলারের চেয়ে একটু বেশি।
এফওয়াই ২১-এ অর্থনীতির ১০.৩% সঙ্কোচন হবে
এপ্রিলের পর থেকে, এটা হল আইএমএফ-এর তৃতীয় এস্টিমেট। আইএমএফ তাদের এপ্রিল মাসের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুকে বলেছিল, ভারত ১.৯% হারে বাড়বে। জুন মাসে তারা তাদের হিসেব সংশোধন করে ৪.৫% সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দেয়। এবং এই রিপোর্টে যে এস্টিমেট দেওয়া হয়েছে, তা জুনের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ পয়েন্ট কম, আর এপ্রিলের তুলনায় ১২.২ শতাংশ পয়েন্ট কম। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, "ভারতের ক্ষেত্রে পূর্বাভাসের সংশোধনটা বেশ বড় মাপের। সেখানে ক্যালেন্ডার বর্ষের দ্বিতীয় ভাগে জিডিপির সঙ্কোচনটা দ্বিতীয় কোয়ার্টারের অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি হয়। এফওয়াই ২১-এর প্রথম কোয়ার্টারে বা ক্যালেন্ডার বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়, ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কোচন হয় ২৩.৯%।
যে সব অর্থনৈতিক মানদন্ড আইএমএফ বিবেচনা করে তার মধ্যে আছে, কোভিড-১৯-এর জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে "ব্যয়ের ক্ষেত্রে তীব্র সঙ্কোচন ও বিনিয়োগ থমকে যাওয়া", কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকা ও ক্রমবর্ধমান মূদ্রাস্ফীতি, যার প্রধান কারণ হল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি।
অনুমান করা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কোচন হবে ৪.৪% আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা হবে ৪.৩%।
আইএমএফ ছাড়াও আরও কিছু বড় অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কোচন সম্পর্কে নিজেদের এস্টিমেট প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে গোল্ডম্যান সাকস-এর দেওয়া ১৪.৮% সঙ্কোচনের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি।
আইএমএফ-এর সাম্প্রতিকতম ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক পড়া যাবে এখানে।
এই এস্টিমেট সম্পর্কে কেয়ার রেটিংস-এর (CARE Ratings) মদন সবনবিস আর বুমের গোবিন্দ এথিরাজের সাক্ষাৎকার নীচে দেখুন।
আরও পড়ুন: ভারতে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন: যা জানা প্রয়োজন