ইংরেজি খবরের চ্যানেল এনডিটিভিতে কছ গুজরাতের গাঁধীধামে তানিশকের একটি গয়নার দোকানে একদল উত্তেজিত জনতা সোমাবার ভাঙচুর চালায় বলে ভুল খবর প্রকাশিত হয়। ভিন্ন ধর্মে বিয়ের ঘটনাকে উদযাপন করা একটি বিজ্ঞাপনকে ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর এই খবর প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় পুলিশ আধিকারিক, দুজন সাংবাদিক এবং গাঁধীধামের তানিশকের শোরুম যে বাড়িতে, সেই একই বাড়িতে অবস্থিত আর একটি দোকানের মালিকের সঙ্গে বুম কথা বলেছে এবং তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন যে, ওই দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়নি।
তবে যে সাংবাদিকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি তিনি জানিয়েছেন যে, এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে একদল লোক ওই বিপণির পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করে। এর পর বিপণির কাঁচের দরজায় গুজরাতিতে হাতে লেখা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। একটি ভিডিওতে এক জন লোককে বলতে শোনা যায়, "আমি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনারা ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি বাইরে ঝুলিয়ে দেবেন এবং আমার সঙ্গে তা শেয়ার করবেন।"
সোমবারে কত জন লোক ওই বিপণিতে হাজির হয়েছিল এবং ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করে, তা বুম নিজে অনুসন্ধান করে জানতে পারেনি।
তানিশকের একটি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় এক হিন্দু বউমার জন্য তাঁর মুসলিম শাশুড়িমা শিশুর জন্মের আগে সাধ ভক্ষণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই বিজ্ঞাপনটি ঘিরে তানিশককে ভারতীয় দক্ষিণপন্থীদের ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রোল হওয়ার পর এই কোম্পানি বিজ্ঞাপনটি তুলে নেয়। মঙ্গলবার তানিশক একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে, কিছু লোকের আবেগ আহত হয়েছে এবং তার কর্মী, অংশীদার এবং দোকানের কর্মচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বিজ্ঞাপনটি তুলে নিচ্ছে।
বুধবার এনডিটিভির একটি সূত্র নির্ভর প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, গাঁধীধামের একটি বিপণিতে আক্রমণ করা হয়। ওই চ্যানেলে আরও জানানো হয় যে, বিপণির ম্যানেজারকে ক্ষমাপ্রার্থণা করে একটি নোট লিখতে জোর করে বাধ্য করা হয়।
এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে সোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয় যাতে একটি দোকানের বাইরে গুজরাতি ভাষায় হাতে লেখা একটি নোটিস দেখা যাচ্ছে। গুজরাতিভাষায় লেখা ওই ক্ষমা চাওয়ার নোটিসের বাংলা অনুবাদ, 'বিভিন্ন মাধ্যমে দেখানো তানিশকের বিজ্ঞাপনটি লজ্জাজনক এবং কছ জেলার হিন্দু সমাজের কাছে গাঁধীধামের তানিশক ক্ষমা চেয়েছে।'
'ব্রেকিং নিউজ' হিসাবে দেখানো টুইটে এই প্রতিবেদনটি কোন সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি এবং ঘটনাটি বুধবার ঘটেনি।
অনেকেই খবরটিকে দোকানে ভাঙচুর ঘটনা চালানোর বলে মনে করে যা আসলে সত্যি নয়।
তবে পরে বিপণিতে উপস্থিত কর্মচারীদের এক জন একটি অডিও ক্লিপে বিপণিতে আক্রমণের ব্যাপারটি অস্বীকার করার পর ওই চ্যানেলের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে।
ওই দিনই কিছু পরে চ্যানেল একটি টুইট করে বিবৃতি দেয়, "গুজরাত পুলিশ জানিয়েছে যে একদল লোক তানিশকের বিপণিতে গিয়ে হুমকি দেয় এবং বিপণির ম্যানেজারকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তারা দাবি করেছে যে, এটা আক্রমণ নয়।"
আনন্দবাজার ডিজিট্যালের খবর বুম দেখে আনন্দবাজার ডিজিট্যালে ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত খবরে লেখা হয়, "
আর এ নিয়েই নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধে। সোমবার রাতে গুজরাতের গাঁধীগ্রামে ওই সংস্থাটির একটি স্টোরে হামলা চালায় এক দল লোক।" ওই প্রতিবেদনটির শিরোনাম লেখা হয়, "থামছে না বিজ্ঞাপন বিতর্ক, এ বার গয়না সংস্থার স্টোরেই হামলা।" প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে। পরে অন্য একটি প্রতিবেদনে সেই ভুল শুধরে নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিট্যাল লেখে, "কিন্তু গাঁধীধামের পুলিশ পরে জানায়, শো-রুমটির ম্যানেজারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বটে তবে কোনও ভাঙচুর বা তাণ্ডব চলেনি। এলাকায় কোনও গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়নি বলেও জানিয়েছে পুলিশ।"
বুম এনডিটিভি চ্যানেলের এক জন এডিটরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
তানিশকের গাঁধীধাম বিপণিতে আমরা অনেক বার যোগাযোগ করলেও কোনও উত্তর পাইনি।
বুম তার পর গাঁধীধাম থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এক জন পুলিশকর্মী, যিনি নিজেকে শঙ্কর বলে পরিচয় দেন, তিনি বুমকে জানান, "আমরা বিপণিতে যাই এবং দেখতে পাই দোকানের উপর কোনও আক্রমণ হয়নি।" ওই পুলিশকর্মী আরও জানান যে, ম্যানেজার ভাঙচুর বা হুমকির কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।
তানিশকের বিপণি যে বাড়িতে সেই একই বাড়িতে উপর তলায় একটি কার্গো বহনকারী সংস্থার অফিস রয়েছে। ওই সংস্থার মালিক বুমকে জানান যে, একদল লোক এসেছিল, কিন্তু কোনও আক্রমণ বা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি।
কার্গো বহনকারী সংস্থার মালিক ইউসুফ বুমকে বলেন, "১২ তারিখের পর থেকেই এখানে লোক আসছিল কিন্তু কোনও গোলমাল বা দোকানের উপর কোনও আক্রমণ করা হয়নি। আজ (১৪ অক্টোবর) এখানে পুলিশ এসেছিল, তার পর নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে, কিন্তু তার বেশি কিছু হয়নি"।
আজ তানিশক বিপণির সামনে দাঁডিয়ে থাকা পুলিশের গাড়ির ছবি যা ইউসুফ বুমকে পাঠিয়েছেন
বুম দুজন সাংবাদিকের সঙ্গেও কথা বলে। তাঁরা জানিয়েছেন যে, এক দল লোক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি নিয়ে ওই বিপণিতে গিয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিক জানান, "গাঁধীধামের কাছের গ্রাম থেকে কিছু লোক ওই বিপণিতে আসে এবং কিছু মানুষের আবেগ আহত হয়েছে বলে বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ম্যানেজারকে ক্ষমা-প্রার্থনা করতে হবে বলে দাবি করে। সমস্যা এড়ানোর জন্য দোকানের বাইরে একটি ব্যানার লাগানো হয় এবং পরে তা সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পর আজ একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যাতে এক ব্যক্তিকে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ ওই বিপণিতে যায় এবং তাদের জানানো হয় যে, সেখানে আক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটেনি"।
নীচে দেখুন ক্লিপটি।