Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
বিশ্লেষণ

রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারি: ক্যানাবিস ও ভারতে তার আইনি অবস্থান

রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারির ক্ষেত্রে ক্যানবিস রাখা ও সেবন করার ব্যাপারে ১৯৮৫’র এনডিপিএস আইন প্রয়োগ সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উঠেছে।

By - Archis Chowdhury | 12 Sep 2020 6:55 AM GMT

নিজের ও তাঁর বন্ধু অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জন্য ক্যানাবিস বা গাঁজা গোত্রীয় মাদকদ্রব্য কেনার অভিযোগে বলিউড তারকা রিয়া চক্রবর্তীকে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো মঙ্গলবার গ্রেফতার করে। তাঁর সম্পর্কে এনসি্বি'র রিমান্ড রিপোর্টে বলা হয়েছে, "তিনি এক মাদক সরবরাহকারী মাদক সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য"।

রাজপুতের পরিবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিনেতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে মামলা করার পর থেকে চক্রবর্তী ভারতে জনতার রোষের শিকার হয়েছেন। প্রথমে চক্রবর্তী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু খবরে প্রকাশ যে পরে তিনি 'জয়েন্ট'(মারিজুয়ানা ভর্তি সিগারেট) সেবন
 করার কথা স্বীকার করেন। এবং এখন তাঁকে মুম্বাইয়ের বাইকুলা কারাগারে জেল হিফাজতে রাখা হয়েছে।
ক্যানাবিস বা গাঁজা হল এমন একটি বেআইনি মাদকদ্রব্য যা ভারতে ব্যাপক হারে খাওয়া হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেটি এ দেশে বৈধই ছিল। তাছাড়া কয়েক হাজার বছর ধরে গাঁজা ভারতের নানা আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। দেখে নেওয়া যাক ক্যানাবিস সঙ্গে রাখা, সেবন করা, বিতরণ করা এবং তা চাষ করা সম্পর্কে আইন কী বলে।
এনডিপিএস অ্যাক্ট ১৯৮৫

১৯৮৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার 'নারকোটিক ড্রাগ অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্টানসেস অ্যাক্ট' প্রণয়ন করে। এই আইন অনুযায়ী, মাদক ও সাইকোট্রপিক (যা মনকে প্রভাবিত করে) দ্রব্য উৎপাদন, সঙ্গে রাখা, বিতরণ, কেনা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। একমাত্র চিকিৎসা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এর ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়।
রোনাল্ড রেগান-পরিচালিত সরকারের "মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" অভিযান চলাকালে, মার্কিন সরকারের চাপে রাজীব গান্ধীর অধীনে এই আইন পাস হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে চিকিৎসা ও ব্যবসার স্তরে ক্যানাবিসের ব্যবহার আইনসিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে কিন্তু ক্যানাবিস সংক্রান্ত ১৯৮৫ সালের এনডিপিএস অ্যাক্ট এখনও বলবদ আছে। তার ফলে, ওই গাছের ফল-ধরা উপরিভাগ (গাঁজা) ও রেজিন বা রঞ্জক (চরস) সঙ্গে রাখলে বা সেবন করলে ঘোরতর আইনি সমস্যায় পড়তে হতে পারে। শাস্তির মাত্রাটা নির্ভর করে মাদকের পরিমাণের ওপর, যেমনটা হয় কোকেন বা হেরোইনের মত মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে।
কম পরিমাণ (১ কেজির কম গাঁজা, ১০০ গ্রামের কম চরস রঞ্জক, ২ গ্রাম কোকেন, ৫ গ্রাম হেরোইন): এই পরিমাণের জন্য অভিযুক্তকে ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড বা ১০,০০০ টাক জরিমানা বা দুইই ভোগ করতে হতে পারে।
কম ও ব্যবসায়িক পরিমাণের মধ্যে কোনও পরিমাণ (১-২০ কেজি গাঁজা, ১০০ গ্রাম-১ কেজি চরস, ২-১০০ গ্রাম কোকেন, ৫ গ্রাম-২৫০ গ্রাম হেরোইন):
এর জন্য অভিযুক্তর ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
ব্যবসায়িক পরিমাণ (২০ কেজির বেশি গাঁজা, ১ কেজির বেশি চরস, ১০০ গ্রামের বেশি কোকেন, ২৫০ গ্রামর বেশি হেরোইন): এর জন্য অভিযুক্তের ১০ থেকে ২০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১-২ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
উত্তরাখণ্ড হল প্রথম রাজ্য যেটি ২০১৮ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য গাঁজা চাষ বৈধ ঘোষণা করে। ওই গাছের উচ্চমানের তন্তু আর নানান ওষোধি ও পুষ্টিগত গুণের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাছাড়া ওই গাছ থেকে তৈরি ভাঙ্গ চাটনি বা ভাঙ্গ সব্জি সেখানকার খাদ্য তালিকায় খুবই সাধারণ খাবার বলে বিবেচিত হয়।
ভাঙ্গের বিষয়টা কি?
ভারতে ক্যানাবিস বেআইনি হলেও, ক্যানাবিস বীজ আর পাতার মিশ্রন থেকে তৈরি ভাঙ্গ ধর্মীয় উৎসবে খাওয়া হয় এবং সারা দেশে সরকার অনুমোদিত দোকান থেকে বিক্রিও হয়।

সনাতনী ভারতীয় পানীয় ভাঙ্গ ঠাণ্ডাই, দুধ, আমন্ড, মশলা আর গাঁজার বীজ আর পাতা দিয়ে তৈরি হয় এবং উৎসব ও হোলির সময় সারা দেশে আইনসিদ্ধভাবে বিক্রি হয়

সাইকোট্রপিক বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও ভাঙ্গ আইনসিদ্ধ কেন, যখন অন্যগুলি বেআইনি? এর উত্তর হল এনডিপিএস অ্যাক্টে ভাঙ্গকে ক্যানাবিসের সংজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। তাই সেটি এই আইনের আওতায় পড়ে না।
    এনডিপিএস অ্যাক্টের পরিচ্ছেদ 2(iii) অনুযায়ী ক্যানাবিস (হেম্প)-এর সংজ্ঞা হলো:
    ক) চরস বা ক্যানাবিস গাছ থেকে বার করে আনা অপরিশোধিত বা পরিশোধিত রঞ্জক। তার মধ্যে ঘন করা রঞ্জক বা হাসিস ও হাসিস তেলও পড়ে।
    খ) গাঁজা বা ক্যানাবিস গাছের ফুল ও ফল-ধরা ওপরের অংশ (বীজ আর পাতা বাদ, যদি না তা ওপরের ভাগের সঙ্গে থাকে), তা সে যে নামেই পরিচিত হোক না কেন।
    গ) ক্যানাবিসের এই সব উপাদান দিয়ে তৈরি যে কোনও মিশ্রণ, তাতে অন্য কোনও আলাদা বস্তু থাক বা না থাক, বা তাই দিয়ে তৈরি কোনও পানীয়।
ভারতে ক্যানাবিসের ব্যবহার
ভারতে ক্যানাবিসের চাষ ও ব্যবহারের সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় এর ব্যবহার ও বন্টন ব্যবস্থা বেশ বিস্তৃত। মিনিস্ট্রি অফ সোশাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট বা সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের করা একটি সমীক্ষায় ('ম্যাগনিটিউড অফ সাবস্টেন্স ইউজ ইন ইন্ডিয়া ২০১৯) দেখা গেছে ২.৮৩% ভারতীয় (প্রায় ৩১ মিলিয়ন বা ৩.১ কোটি মানুয়) গত বছর ক্যানাবিস সেবন করেছেন বলে স্বীকার করেন। দেখা যায়, ক্যানাবিসের সব চেয়ে বেশি ব্যবহার হয় উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, চণ্ডিগঢ় আর দিল্লিতে।
২০১৯ সালে '
ইন্টারন্যাশন্যাল নারকোটিক্স কন্ট্রোল বোর্ড
'-এর রিপোর্টে বলা হয়, "ভারত বিশ্বের সেই সব দেশের মধ্যে পড়ে যেখানে ক্যানাবিসের বেআইনি চাষ ও উৎপাদন ব্যাপক হারে হয়ে থাকে।"
তাছাড়া জার্মান ডেটা কম্পানি এবিসিডি  দেখে যে ২০১৮ সালে দিল্লি ও মুম্বাই ৩৮.২ টন ও ৩২.৪ টন ক্যানাবিস সেবন করে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যানাবিস ব্যবহারকারী শহরগুলির তালিকায় যথাক্রমে তৃতীয় ও ষষ্ঠ স্থান দখল করে আছে।
রিয়া চক্রবর্তীর কেস
রিমান্ড রিপোর্ট অনুযায়ী, রিয়া চক্রবর্তী এনডিপিএস আইনের ধারা ৮ সি (আন্তরাজ্য সাইকোট্রপিক দ্রব্য চালান), ধারা ২০ বি (মাদকদ্রব্য নিজের কাছে রাখা ও স্থানান্তরিত করা), ধারা ২৭ এ (অপরাধীদের টাকা ও আশ্রয় দেওয়া), ধারা ২১ (মাদকদ্রব্য তৈরি), ধারা ২২ (মাদকদ্রব্য খাওয়া), ধারা ২৯ (অপরাধমূলক চক্রান্ত) ও ধারা ২৮'য় (অপরাধ করার চেষ্টা) অভিযুক্ত হয়েছেন।
ওই রিপোর্টে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে, "চক্রবর্তী মাদকদ্রব্য যোগান দেওয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত", কিন্তু বুধবার 'মুম্বাই মিরার' তাদের রিপোর্টে বলে যে, এখনও পর্যন্ত সেই অভিযোগ প্রমাণ করার মতো প্রমাণ এনসিবি আধিকারিকদের হাতে নেই। এনসিবি'র এক উচ্চপদস্থ অফিসার ওই সংবাদপত্রকে বলেন যে, কেবল মাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহার ও রাজপুতের জন্য মাদকদ্রব্য কেনার ইতিহাস খুঁড়ে বার করতে পেরেছে ওই সংস্থা। চক্রবর্তীর নিজের কাছে রাখা কোনও মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি।
মাদক ব্যবসায়ী বলে অভিযুক্ দুই ব্যক্তি, আব্বাস রামজান আলি ও করল অরোরাকে এনসিবি গ্রেপ্তার করে। বলা হয় তাদের কাছে ৫৯ গ্রাম মারিজুয়ানা পাওয়া গেছে। তবে তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে। 'দ্য প্রিন্ট' বলছে যে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এটাই হল একমাত্র জোরাল প্রমাণ যেটা এনসিবি'র হাতে এসেছে।
৫৯ গ্রাম ব্যবসায়িক পরিমাণের (২০ কেজি বা তার বেশি) ধারে কাছেও যায় না। এবং সেটাকে কম পরিমাণ (১ কেজির কম) বলেই গণ্য করা হবে। তার জন্য শাস্তি হল ৬ মাসের জেল বা ১০,০০০ টাকা জরিমানা বা দুইই।
তবে প্রথমবার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ওই সামান্য পরিমাণকে খুব কঠোর ভাবে দেখা হয় না।
এনসিবি'র ডিপুটি ডিরেক্টর মুথা অশোক জৈন রবিবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "আমরা সাধারণত আন্তর্জাতিক ও আন্তরাজ্য যোগাযোগগুলি অনুসন্ধান করি। আমরা বড় মাছের সন্ধান করে থাকি। সাধারণভাবে এটা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু এখন আমাদের কাছে তথ্য আসছে। তাই আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াব না।"
ফেয়ে ডিসুজার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিনিয়র আইনজীবী সি আচার্য সুন্দরম বলেন যে, রিমান্ড রিপোর্টটি স্ববিরোধী ও ভ্রান্ত। "রিয়া চক্রবির্তী যদি তাঁর (রাজপুতের) পার্টনার হয়ে থাকেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাঁর হয়ে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে থাকেন, তা হলে রাজপুতই তো প্রথম অভিযুক্ত হতেন যদি তিনি জীবিত থাকেতেন।"
ওই একই অনুষ্ঠানে সিনিয়র অ্যাডভোকেট গীতা লুথরা বলেন, মাদক নেওয়ার বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে তো কোনও কেসই ফাইল করা হয় না। "তাছাড়া ১৯৮৫'র এনডিপিএস আইনের ধারা ৬৪(এ) তে বলা আছে কেউ যদি ব্যবহারকারী হয়, তা হলে তাকে রক্ষা করা হবে।"
তিনি বলেন, "এই কেসটা তার নির্ধারিত লক্ষের দিকেই এগোচ্ছে: রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারি।"

Related Stories