বিধানসভা ভোটের এখনও মাস কয়েক বাকি, কিন্তু ইতিমধ্যেই তৃণমূল (All India Trinamool Congress) ও বিজেপি (Bharatiya Janata Party) সমর্থকরা ফেসবুকে (Facebook) দলের জন্য রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে (Political Advertisement) ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ফেলেছেনl
এ ছাড়া ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক প্রচারেও হাত লাগিয়েছে দুই দলেরই ফেসবুক সমর্থকরাl বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচারের এই সব পেজ যোগাযোগ করার জন্য নিজেদের টেলিফোন নম্বর এবং ঠিকানাও সরবরাহ করেছে, যেগুলি সবই ভুয়োl
গত ২১ নভেম্বর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজ্ঞাপনে এক লাখের ওপর খরচ করা এই ধরনের ১৫টি প্রধান পেজ বুম ফেসবুক-এর বিজ্ঞাপন লাইব্রেরি (Facebook Ad Library) থেকে ঘেঁটে দেখেছেl তাতে কিছু মজাদার প্রবণতা লক্ষ করা গেছেl
টিএমসি বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে
শেষ বার যখন বিজেপি টিএমসির মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৯ সালে, তখন এই বাবদে বিজেপি অনেক বেশি টাকা খরচ করেছিলl সেটা ছিল লোকসভার নির্বাচনl এবারের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে টিএমসি কিন্তু এই বিজ্ঞাপনী প্রচারের খরচে বিজেপিকে অনেকটাই পিছনে ফেলেছেl
২৭ লক্ষ তৃণমূলি সমর্থিত 'বাংলার গর্ব মমতা' পেজটি ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপনে ৯৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করেছে, খরচ হয়েছে আইপ্যাক (I-PAC) নামক সংস্থার হাত দিয়ে, যা তৃণমূল কংগ্রেসের ভাড়া করা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishore) কোম্পানিl
মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee) ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির (Avishek Banerjee) প্রচারে ইতিমধ্যেই টিএমসি-র সরকারি ফেসবুক পেজ বিজ্ঞাপন বাবদ আরও ৭ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয় করেছেl 'দৃষ্টিভঙ্গি' নামে টিএমসি-র চালানো অন্য একটি ফেসবুক পেজও এই একই সময়ের মধ্যে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছেl সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকাl
বিজেপি কিন্তু গত ৯০ দিনে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বাবদ মাত্র ৭৩ লক্ষ টাকা খরচ করে উঠতে পেরেছেl তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে 'আমার পরিবার বিজেপি পরিবার' পেজটি (৩২ লক্ষ ৯০ হাজার) এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে 'আর নয় অন্যায়' (৩০ লক্ষ ৪০ হাজার) পেজটিl 'মোদীপাড়া' নামে অন্য একটি পেজ এবং রাজ্য বিজেপির সরকারি পেজ-এও দলীয় বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছে—খরচ যথাক্রমে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার এবং ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকাl তালিকার একদম শেষে রয়েছে বিজেপি-সমর্থক দুটি ফেসবুক পেজ--যার একটির নাম 'চুপচাপ কমল ছাপ' (যেটি খরচ করেছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা) এবং অন্যটি সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাগ দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেজ (যার খরচ ১ লক্ষ)l
ফেসবুক বিজ্ঞাপনে দলগত ব্যয়:
এক লক্ষের বেশি টাকা খরচ করা পেজগুলি হল 'ইয়ুথ ইন পলিটিক্স' (২ লক্ষ ২২ হাজার) এবং আইপ্যাক-এর নিজস্ব পেজ (২ লক্ষ ১১ হাজার)l
কুৎসা প্রচারকারী
আমরা এমন তিনটি ফেসবুক পেজও দেখেছি, যেগুলো টিএমসি কিংবা বিজেপির বিরুদ্ধে কুত্সা প্রচারে লিপ্ত, অথচ যে পেজগুলি সরাসরি কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত থাকার দাবি জানায়নিl গত ৯০ দিনে এই পেজগুলিই বিজ্ঞাপন বাবদ ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছেl
এদের মধ্যে এক নম্বর স্থানে রয়েছে 'ক্ষতিকারক মোদী' নামে একটি পেজ, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সম্পর্কে কুত্সায় লিপ্তl গত ৯০ দিনে এই পেজটি ৫১ লক্ষ টাকার বেশি বিজ্ঞাপন দিয়েছেl সেই হিসাবে 'বাংলার গর্ব মমতা'র পরেই এর স্থানl
অন্য দুটি উল্লেখযোগ্য পেজ হল 'নির্মমতা' এবং 'ফ্রাসট্রেটেড বেঙ্গলি', যে দুটি মমতা-নিন্দক পেজ যথাক্রমে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার এবং ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছেl
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে বিজেপির নিন্দা বা সমালোচনা করে প্রচারিত পেজগুলোর বিজ্ঞাপন টিএমসি-র প্রতি সমালোচনামূলক বিজ্ঞাপনের ১৪ গুণ বেশিl মজার ব্যাপার হল, কোনও পেজই নিজের পরিচয় দেয়নি এবং যোগাযোগের যে সব সূত্র দিয়েছে, তার সবই ভুয়োl
অচিরেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে টিএমসি এবং বিজেপি তিক্ত পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হচ্ছে। শেষ যে বার এই দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল, ২০১৯ সালের সেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৬টি লোকসভা আসন বাড়িয়ে ২ থেকে ১৮-তে পৌঁছেছিল আর টিএমসি ১২টি আসন হারিয়ে ৩৪ থেকে ২২-এ নেমে এসেছিলl এর সঙ্গে যোগ করুন দুই দলের ক্ষমতা দখলের তীব্র লড়াই, যা সিপিআইএম, কংগ্রেস বা মিম-এর মতো সংগঠনকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছেl সিপিআইএম যেখানে গত ৯০ দিনে ফেসবুকে প্রচার বাবদ মাত্র ৯০ হাজার টাকা খরচ করতে পেরেছে, সেখানে কংগ্রেস খরচ করেছে মোটে ৮০০ টাকাl
একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে গত ৯০ দিনে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে ফেসবুকে ৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন ছাড়া হয়েছেl
সম্পাদকের টিপ্পনি: এই প্রতিবেদনটির আগের সংস্করণে এই গোটা অঞ্চলের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে প্রচারিত রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের কথাই বলা হয়েছিলl কিন্তু এবারকার সংশোধিত প্রতিবেদনে তার পরিধি সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রচারের পেজগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছেl