পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদী শনিবার একটি বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করেছেন যাতে দাবি করা হয়েছে যে ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রশন (নাসা) সূর্য থেকে নির্গত 'ওম' ধ্বনি রেকর্ড করেছে।
বেদী যে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন সেটি ২০১৮ সালে নাসার প্রকাশ করা সূর্যের শব্দায়নের ভিডিও নয়, বরং এটি একটি অন্য ভিডিও যাতে 'ওম' ধ্বনি জোরে শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া নাসা সূর্যের শব্দের সঙ্গে 'ওম' ধ্বনির সম্পর্ক নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বেদী নীচের ভিডিওটি টুইট করেন। ভিডিওটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে বলা হয়েছে যে প্রাচীন কালের সভ্যতাগুলি জানত যে সূর্য থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়, এবং এই কারণে তারা সূর্যকে পূজা করত।
— Kiran Bedi (@thekiranbedi) January 4, 2020
বেদীর করা এই টুইটের সঙ্গে তেলেগু টিভি চ্যানেল স্নেহা টিভির করা ২০১৮ সালের একটি নিউজের ক্লিপিংও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর স্নেহা টিভি ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেয়। সত্যতা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এই ভিডিওটি বুমের হোয়্যাটস অ্যাপ হেল্পলাইনে আসে।
তথ্য যাচাই
বেদীর টুইট করা ভিডিওতে বুম একটি লোগো দেখতে পায় এবং জানতে পারে যে ভিডিওটি ২০১৭ সালে ইউটিউবে শেয়ার করা হয়েছিল। বেদীর শেয়ার করা ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটি আসলে ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ড লম্বা ওই মূল ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে।
আমরা আরও দেখতে পাই যে এই ভিডিওটিতে যে দৃশ্য দেখা যায়, এবং যে ওম ধ্বনি শোনা যায়, তা ২০১৮ সালে নাসার প্রকাশ করা আসল ভিডিওর থেকে আলাদা।
আরও অনুসন্ধান করে বুম জানতে পারে যে চার বছর আগে "ইট হ্যাপেনস অনলি ইন ইন্ডিয়া" নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা অন্য একটি ভিডিও এবং স্নেহা টিভির ব্যবহার করা ভিডিও আসলে একই। স্নেহা টিভি এবং কিরণ বেদীর শেয়ার করা ভিডিওর শব্দ একই কিন্তু ভিডিও দুটি তৈরি করা হয়েছে আলাদা গ্রাফিকস ব্যবহার করে।
ফেসবুকের ভিডিওটির ক্যাপশনে বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাসা কী ভাবে এই শব্দ রেকর্ড করেছে তা বোঝানো হয়েছে। তার পর আওয়াজের পরিমাণ বাড়িয়ে একটি শব্দ শোনানো হয়েছে, যা শুনতে ভারতীয় ওম ধ্বনির মতো। এই পোস্টটিতে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি গবেষণার কথা বলা হয়েছে, যে প্রযুক্তির সাহায্যে এই শব্দ নেওয়া হয়েছে তা বোঝানো হয়েছে এবং সঙ্গে ওম মন্ত্রধ্বনির গুরুত্ব এবং আধ্যাত্মিকতা বোঝানো হয়েছে।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্টাডিটি ২০১০ সালে করা হয় এবং এতে দেখানো হয় যে সূর্যের আবহাওয়ায় অনেক চৌম্বক গ্রন্থি আছে। কিন্তু তাতে কোনও শব্দ রেকর্ড করা হয়নি কারণ শব্দ শূন্যের মধ্য দিয়ে যেতে পারেনা। এই স্টাডিটিতে 'ওম' উচ্চারণ নিয়ে কোনো কথা ছিল না।
ফেসবুক পোস্টটিতে আরও বলা হয়েছে যে নাসা ওম ধ্বনি সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য করেনি, কিন্তু ওই শব্দকে 'ওম' ধ্বনি বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
নাসার মূল ভিডিও
২০১৮ সালের জুলাই মাসে নাসা সূর্যের শব্দের উপর তাদের গবেষণা প্রকাশ করে। সেখানে তারা ইএসএ (ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সি) এবং নাসার সোলার হেলিওস্ফেরিক অবজারভেটরির (সোহো) নানা তথ্য দেয়। তারা কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে সূর্যের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নথিবদ্ধ করে রেখেছে।
নাসার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল দুটি ভিডিও আপলোড করে। এই ভিডিওদুটির একটিতে সূর্যের শব্দ ও তরঙ্গ দেখা যায় এবং অন্যটিতে মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের হেলিওফিজিক্স সায়েন্স ডিভিসনের অ্যাসোসিয়েটের ডিরেক্টর অ্যালেক্স ইয়ং-এর গলা শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে বলা হয়েছে যে অন্য সব জিনিসের মত সূর্যেরও তরঙ্গ এবং আছে। নাসা বিভিন্ন প্রযুক্তির সাহায্যে এই তরঙ্গকে শব্দে পরিণত করেছে যা সূর্যের মধ্যে চলা বিভিন্ন জটিল গতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকদের বিভিন্ন গবেষণায় সাহায্য করবে। নাসা জানিয়েছে যে এই সব গতির মধ্যে সোলার ফ্লেয়ার থেকে করোনাল মাস ইজেকশনের মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।
নাসা ২০১৮ সালের জুলাই মাসেও এটি টুইট করে জানায়।
The Sun is not silent. The low, pulsing hum of our star's heartbeat allows scientists to peer inside, revealing huge rivers of solar material flowing, along with waves, loops and eruptions. This helps scientists study what can't be seen. Listen in: https://t.co/J4ZC3hUwtL pic.twitter.com/lw30NIEob2
— NASA (@NASA) July 25, 2018
এই অডিওটি সাউন্ডক্লাউডেও পাওয়া যাচ্ছে।এই শব্দ ওম ধ্বনির মত কিনা সে বিষয়ে নাসা কোনও মন্তব্য করেনি। বৈজ্ঞানিকরা এই শব্দের সঙ্গে ওম ধ্বনির সঙ্গে কোনও মিল পেয়েছেন কি না, তা জানতে বুম নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের উত্তর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিবেদন সংস্করণ করা হবে।