উত্তরপ্রদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় অসহযোগিতা করা মুসলমানদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে একজন মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, এমন দাবি করে বিভিন্ন পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। বুম দেখেছে দাবিটি ভিত্তিহীন, ভাইরাল হওয়া ছবিটি একজন ফার্মাসিস্টের, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে যার মৃত্যু হয় মধ্যপ্রদেশে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে একজন মহিলাকে মুখে ইন্টিউবেশন টিউব লাগানো অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। সমগ্র ঘটনাকে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক মোড় দেওয়া হয় ভাইরাল পোস্টে।
ছবিটির সঙ্গে থাকা ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে যে এই মৃত ভদ্রমহিলা একজন চিকিৎসক। উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামে তিনি যখন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষা করতে যান তখন গ্রামের স্থানীয় মুসলমানরা রোগের পরীক্ষায় অসহযোগিতা করে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়তে শুরু করে। একটি পাথরের আঘাতে সেই চিকিৎসক গুরুতরভাবে আহত হন এবং পরে মৃত্যু হয় সেই চিকিৎসকের। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই পোস্টের ক্যাপশনে হিন্দিতে লেখা হয়েছে, "বন্ধুরা, একটা খারাপ খবর আছে। ডাক্তার বন্দনা তিওয়ারি মারা গেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা করতে তিনি উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলেন কিন্তু জিহাদিরা তাঁকে আক্রমণ করে এবং তাতে তিনি গুরুতর আহত হন। এক যোদ্ধা, যিনি অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছিলেন, তিনি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন। তাঁর জন্য সমবেদনা।"
আরও পড়ুন: তবলিগি জামাত সদস্য আইসোলেশান ওয়ার্ডে উলঙ্গ হয়ে ছুটছে, এই ভিডিওটি অসত্য
(মূল হিন্দি ক্যাপশন: "मित्रों दुखद खबर डॉक्टर वंदना तिवारी जी कि मृत्यु हो गई | वह पिछले हफ्ते ही यूपी के एक गाँव में कोरोना टेस्ट के लिए गई थी? लेकिन जिहादीयों ने उन पर हमला करके गंभीर रूप से घायल कर दिया था! लोगों के जीवन बचाने में जुटी एक योद्धा पिछले सात दिन से अपना जीवन बचाने के लिए मौत से लड़ रही थी पर वो हार गई!! भावपूर्ण श्रद्धाजंली।")
পোস্টটা আর্কাইভ করা আছে এখানে।
मित्रों दुखद खबर डॉक्टर वंदना तिवारी जी की मृत्यु हो
— Pramod Singh (@pksingh4981) April 9, 2020
वह पिछले हफ्ते ही यूपी के एक गाँव में कोरोना टेस्ट के लिए गई थी?
लेकिन उन पर #हमला करके गंभीर रूप से घायल कर दिया गया था!
लोगों के जीवन बचाने में जुटी एक #योद्धा पिछले सात दिन से अपना जीवन बचाने के लिए मौत से लड़ रही थीं😭 pic.twitter.com/T3VwHb6btX
বিভ্রান্তিকর এই পোস্ট টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ২ এপ্রিল ২০২০ এ ঘটে যাওয়া স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উপর সংগঠিত হওয়া আক্রমণকে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের তাত পাত্তি বাখাল এলাকায় স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি দল কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করার জন্য যায় এবং তাদের উপর আক্রমন চালানো হয়। আউটলুকের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সেই ঘটনায় দুইজন মহিলা চিকিৎসক গুরুতরভাবে আঘাত পান।
আরও পড়ুন: মিথ্যা: পর্যটন মন্ত্রক ঘোষণা করেছে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেল বন্ধ থাকবে
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এবং কয়েকটা সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায় যেখানে এই একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ভোপাল সমাচারে এরকমই একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ছবির এই ভদ্রমহিলার নাম বন্দনা তিওয়ারি। তিনি মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীর জেলা মেডিক্যাল কলেজের এক জন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর্তব্যরত অবস্থায় অসুস্থতা বোধ করার পর বন্দনা তিওয়ারিকে গত ১ এপ্রিল গোয়ালিয়রের বিড়লা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, এবং ৭ এপ্রিল তিনি সেখানে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিওয়ারির করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, শিবপুরী হাসপাতালে তিওয়ারি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন। সেই হাসপাতালের ডিন ইলা গুজরিয়া বুমকে জানান যে বন্দনা তিওয়ারি গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি বুমকে বলেন, "যেহেতু তাঁকে গোয়ালিয়রে ভর্তি করা হয়েছিল, তাই আমাদের কাছে তাঁর চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। তিনি ১ এপ্রিল থেকে কাজে অনুপস্থিত ছিলেন।"
গোয়ালিয়রের বিড়লা হাসপাতালে যে চিকিৎসক তিওয়ারির চিকিৎসা করেছিলেন, বুম তাঁর সঙ্গেও কথা বলে এবং তিনি নিশ্চিত ভাবে বুমকে জানান যে ভাইরাল হওয়া ছবিটি বন্দনা তিওয়ারির। অবশ্য, তিনি তাঁর রোগী সম্পর্কে আর কোনও তথ্য জানাতে অস্বীকার করেন।
শিবপুরী হাঁসপাতালের ডিন এবং বিড়লা হাঁসপাতালের চিকিৎসকের বয়ান অনুযায়ী পুরো ঘটনার ঘটনাক্রমের লক্ষ্য করলে নিশ্চিত হওয়া যায় উত্তরপ্রদেশের গ্রামে বন্দনা তিওয়ারির উপর মুসলমান গ্রামবাসীদের পাথর ছোঁড়ে আক্রমণের দাবিটি ভিত্তিহীন।
আরও পড়ুন: খাবারের দোকানে কর্মীর খাবারের মোড়কে ফুঁ দেওয়ার এই ভিডিওটি ভারতের নয়
উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে গত ১ এপ্রিলে একটি সংঘর্ষের ঘটনার কথা জানা যায়। পুলিশ লকডাউন কার্যকর করার চেষ্টা করলে এক দল গ্রামবাসী তাদের আক্রমণ করে এবং এক জন সাব-ইন্সপেক্টর এবং এক জন কন্সটেবল গুরুতর আহত হন। এই ঘটনা সম্পর্কে বিশদে জানা যাবে এখানে আরও। ১ এপ্রিলের ঘটনায় কোনও স্বাস্থ্য পরিসেবা কর্মীদের উপর আক্রমণ করা হয়নি।
শিবপুরীর পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট রাজেশ চান্দেলের সঙ্গেও বুম কথা বলে। তিনি ভাইরাল হওয়া এই পোস্টের দাবিগুলিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। এস.পি চান্দেল বুমকে বলেন, "তিনি শিবপুরী হাসপাতালে কাজ করছিলেন। তিনি করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও তিনি গোয়ালিয়রের বিড়লা হাসপাতালে মারা যান। গোয়ালিয়রের হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে একটি অস্ত্রোপচারও করা হয়।"
বুম উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ফ্যাক্ট চেকিং টুউটার হ্যান্ডল থেকে করা একটি টুইটের সন্ধান পায়। এই টুইটে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বন্দনা তিওয়ারির মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।
भ्रामक सूचना न फैलाएं !
— UPPOLICE FACT CHECK (@UPPViralCheck) April 9, 2020
समाचार स्रोतों (https://t.co/9eq33NpFyK …) से विदित है कि वंदना तिवारी जी की घटना का सम्बन्ध मध्य प्रदेश से है , उत्तर प्रदेश में इनसे जुडी ऐसी कोई घटना नहीं हुई है|@agrapolice : सूचनार्थ एवं आवश्यक कार्यवाही हेतु|#UPPAgainstFakeNews https://t.co/Z5C6jum6bs
উক্ত ঘটনা নিয়ে মধ্যপ্রদেশ সরকারের জনসম্পর্ক দপ্তরের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শিবপুরীর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অফিসের একটি বিবৃতি টুইট করা হয়। সেই টুইটে এবং বিবৃতিতে কোথায় পাথর ছোঁড়ার ঘটনার কোন উল্লেখ নেই।
इस प्रकरण के सम्बंध में CMHO कार्यालय, शिवपुरी ने जानकारी दी है कि श्रीमती वंदना तिवारी जी को बिरला हॉस्पिटल में ब्रेन हेमरेज डायग्नोस किया गया। 7 अप्रैल को उनका दुःखद निधन हो गया। हॉस्पिटल ने उनकी कोरोना संक्रमण की रिपोर्ट निगेटिव पाई। pic.twitter.com/KJDq4tNkvi
— Jansampark MP (@JansamparkMP) April 8, 2020
সম্প্রতি সারা দেশ থেকেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নানা বিরোধ ও হিংসার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উত্তেজিত জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিছু জায়গায় লকডাউন কার্যকর করতে যাওয়া পুলিশের উপর আক্রমণ করা হয়েছে।
মার্চে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের মার্কাজের একটি ধর্মীয় সমাবেশে বহু মানুষ অংশ নেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়। এই ঘটনার সামনে আসার পর থেকেই ভারতে মুসলিমদের সার্বিকভাবে লক্ষ্য করে ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিক তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে। এই বিভ্রান্তিকর পোস্টটি তার নবতম সংযোজন। বুম এর আগেও এই রকম অনেক ভুয়ো পোস্টের তথ্য যাচাই করেছে এবং সেগুলিকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে।
আরও পড়ুন: ঝুলন্ত লাশের ছবি মিথ্যে করে লকডাউনের সঙ্গে জোড়া হল