একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ভাইরাল হয়েছে যে ব্রয়লার মুরগিতে করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, যা এই দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম ভুয়ো খবর।
হিন্দিতে লোখা এই বার্তাটিতে বলা হয়েছে, মুম্বইয়ের মফস্বল এলাকা খারের মুসলিম সম্প্রদায়ের তরফে জনস্বার্থে এই বার্তাটি প্রচার করা হচ্ছে।
বার্তাটি হলো: "ব্রয়লার মুরগিতে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। সব লোকের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, তারা যেন ব্রয়লার মুরগির মাংস না খায়। ...মুম্বইয়ের খারে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়।"
বার্তায় ব্রয়লার এবং করোনাভাইরাস শব্দদুটির বানানেও ভুল রয়েছে...লেখা হয়েছে 'boiler' এবং 'Koronavirus' ব্রয়লার হলো সেই মুরগি, যা বেশি মাংসের জন্য কৃত্রিমভাবে চাষ করা হয়।
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে নীচের বার্তাটি পেয়েছে, যার মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
একই ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে, যার সঙ্গে কাটা মাংস ও অসুস্থ মুরগির ছবিও দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাতেও বার্তাটি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার সুপারমার্কেটে তরুণী মৃত্যু হৃদরোগে, করোনাভাইরাসে নয়
তথ্য যাচাই
বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত ২০১৯ সালে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসটিকে শনাক্ত করে উঠতে পারেননি, যেটার উত্স নাকি চিনের উহান প্রদেশের হুনান সামুদ্রিক খাদ্যের বাজারে।
ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে ৫০০র বেশি লোক মারা গেলেও এবং ২০ হাজারের বেশি সংক্রামিত হলেও ভারতে বিক্রি হওয়া মুরগির সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত নয়। চিনে প্রাথমিকভাবে যে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে এবং ল্যান্সেট পত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে, তা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রধানত বাদুড় কেই প্রাথমিক উৎস বলা হচ্ছে।
বুম মুম্বইয়ের কেন্দ্রীয় পোলট্রি উন্নয়ন সংস্থার ডিরেক্টর সত্যেন্দ্র সোয়েনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, "এটা একটা গুজব। ব্রয়লার মুরগি এই ভাইরাসের উত্স নয়। চিন ছাড়া আর কোথাও এই ভাইরাসের উত্পত্তি হয়নি এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে এটা সংক্রামিত হয়ে চলেছে।"
তাহলে ব্রয়লার মুরগিকে কেন নিশানা করা হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁর জবাব: "বিভিন্ন প্রাণির থেকে যে সব খাদ্য প্রস্তুত হয়, সেগুলির বিষয়ে সর্বদাই ভুল তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে।"
বুম তাঁর কাছে জানতে চায়, ব্রয়লার মুরগি খাওয়া নিরাপদ কিনা। জবাবে তিনি জানান— যদি পরিচ্ছন্নতা মেনে ও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে এগুলি পালন করা হয়, তাহলে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সম্পর্কহীন ছবি ভাইরাল বার্তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে
দুটি ছবির খোঁজ নিয়ে বুম দেখেছে, এগুলি অনেক পুরনো ছবি এবং কোনও ভাবেই করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এরকমই একটি চোখ বুজে থাকা মুরগির ছবিটি ইয়েলো বার্ড শর্টস নামক ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে মুরগিটি অ্যাসপারগিলোসিস নামে এক রোগে আক্রান্ত।
অন্য মুরগির ছবিটি কন্টো মহম্মদ নামে এক ব্যক্তি তাঁর গবেষণাপত্রের জন্য আপলোড করেছিলেন ২০১৪ সালে, যার নাম ছিল—'একটি ব্রয়লার ফার্মে কোলিব্যাসিলোসিস রোগের সংক্রমণ।' সেখানে ছবিটার ক্যাপশন ছিল— 'একটি অসুস্থ মুরগিছানা, যে হাঁ করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।'
করোনাভাইরাস নিয়ে যত রকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তার মধ্যে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ছড়ানো গুজবটি সর্বশেষতম। বুম সক্রিয়ভাবে এই সব গুজবের পর্দাফাঁস করে চলেছে। আমাদের তথ্য যাচাইগুলি পড়ুন এখানে।