অতিমারির সময়, বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যমের (media) ওপর আস্থা বেড়েছে, কিন্তু ভারতে তুলনামূলক ভাবে তা কম থেকেছে— এ কথা জানিয়েছে রয়টর্স ইনস্টিটিউট (Reuters Institute) প্রকাশিত 'ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট'। সাধারণ ভাবে ৪৪% উত্তরদাতা সংবাদের ওপর তাঁদের আস্থার কথা জানান, কিন্তু ভারতে (India) সংখ্যাটা ছিল ৩৮%।
সমীক্ষাটি থেকে আরও জানা গেছে যে, ৪৫% মানুষ তাঁদের চিরকালের ব্যবহার করা সংবাদ সূত্রগুলির প্রতিই আস্থাশীল থেকেছেন। অনলাইল মাধ্যমের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সোশাল মিডিয়া থেকে খবরের তুলনায় (৩২%) সার্চ ইঞ্জিনের মারফত পাওয়া খবর মানুষ বেশি বিশ্বাস করছেন (৪৫%)।
সমীক্ষাটিতে আরও দেখা যায় যে, ভারতে ৮২% উত্তরদাতা অনলাইন সূত্র থেকেই খবর সংগ্রহ করেন। সোশাল মিডিয়াই খবরের সবচেয়ে বড় সূত্র বলে দেখা গেছে। ৬৩% উত্তরদাতা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেন।
যন্ত্রের ক্ষেত্রে, ৭৩% ভারতীয় স্মার্টফোনের মাধ্যমেই খবর দেখেন, আর কম্পিউটারে দেখেন মাত্র ৩৭%। দেখা গেছে, খবর পড়ার ব্যাপারে ভারতীয়রাই সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন-নির্ভর। তেমনটাই জানিয়েছে রয়টর্স ইনস্টিটিউট।
ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এ বছর, সারা বিশ্বেই ভুল খবর সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরাই করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভুল খবরের শিকার হয়েছেন বেশি, এমনটাই জানা গেছে। যাঁরা সামাজিক মাধ্যমের ওপর কম নির্ভরশীল, তাঁরা কম বিভ্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: না, ভাইরাল ছবিটি সাম্প্রতিক ভারত-মার্কিন যৌথ মহড়ার যুদ্ধ-জাহাজ নয়
চিরাচরিত মুদ্রণ ও সরকারি সম্প্রচারের মাধ্যমে ভরসা অটুট থেকেছে
খবরের কাগজ/টিভি/রেডিও—এই তিনটি বিভাগ মিলিয়ে খবরের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় থেকেছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এনডিটিভি। যথাক্রমে ৪৪% ও ৪৩% উত্তরদাতা খবরের জন্য এই দুই সূত্রের ওপর নির্ভর করেন।
অনলাইন খবরের ক্ষেত্রে কিন্তু ওই দুই সূত্রের মধ্যে স্থান বদল হয়। প্রতি সপ্তাহে, উত্তরদাতাদের ৩৫% এনডিটিভির ওয়েবসাইট দেখেন। আর টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট দেখেন ৩২%।
কিন্তু সংবাদ পরিবেশনকারী ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থার ক্ষেত্রে, প্রথম স্থানে থাকে টাইমস অফ ইন্ডিয়া। ৭৪% উত্তরদাতা টাইমস অফ ইান্ডিয়ার প্রিন্ট বা ছাপা সংস্করণের ওপর তাঁদের আস্থার কথা জানান। এর পরের স্থানেই রয়েছে দূরদর্শন ও আকাশবাণীর খবর। ৭৩% বলেন তাঁরা ওই দু'টি সংস্থার খবরের ওপর আস্থা রাখেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইকনমিক টাইমস, হিন্দুস্থান টাইমস ও দ্য হিন্দুর মতো মুদ্রণ সংবাদের ব্র্যান্ডগুলির বিশ্বাসযোগ্যতাও অক্ষুন্ন রয়েছে।
মুদ্রণ/টিভি/রেডিও বিভাগে জনপ্রিয়তার নিরিখে রিপাবলিক টিভি ছিল চতুর্থ স্থানে। কিন্তু সেটির প্রতি অনাস্থাও ছিল সবচেয়ে বেশি। ২৯% উত্তরদাতা বলেন, তাঁরা ওই চ্যানেলটিকে বিশ্বাস করেন না।
সমীক্ষাটিতে আরও বলা হয়েছে যে, জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্থান টাইমস দ্য হিন্দুর মতো ঐতিহ্যবাহী মুদ্রিত সংবাদের মাধ্যমগুলি অতিমারি ও লকডাউনে অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়।
"অতিমারিতে ছাপা কাগজ বিতরন ও বিজ্ঞাপন কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের কঠোরতম লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কমে যাওয়ায়, কেম্পানিগুলিকে মাইনে কমাতে হয়েছে, ছাঁটাই করতে হয়েছে, দেশের নানা দিকে স্থানীয় সংস্করণ বন্ধ করতে হয়েছে," বলছে ওই রিপোর্ট।
অনলাইন খবরের মাধ্যমের মধ্যে, সংবাদের ওয়েবসাইট দ্য অয়্যার-এর প্রতি সবচেয়ে বেশি অনাস্থা (২২%) দেখা যায়। আবার দু'টি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনলাইন খবরের সূত্রের একটি হওয়া সত্ত্বেও এনডিটিভির প্রতি আস্থার মাত্রা কিছুটা কম (৬৮%) ও অনাস্থার মাত্রা যথেষ্ট বেশি (১৯%) বলে লক্ষ করা যায়।
সমীক্ষায় আরও দেখা যায় যে, ভারতে ৪৮% উত্তরদাতা সোশাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ ও ইমেলের মাধ্যমে খবর শেয়ার করেন।
খবর শেয়ার করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হল হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউব (৫৩%)। তারপরেই ফেসবুক (৪৩%)।
২০২১-এর জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরু পর্যন্ত অনলাইন প্রশ্নাবলীর সাহায্যে সমীক্ষাটি করে 'ইউগভ' ও তার সহযোগীরা।
সমীক্ষাটি করা হয় ৪৬টি জায়গায়। সব মিলিয়ে ৯২,১৫৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাতে অংশ নেন। এক একটি জায়গায় গড়ে ২,০০০ অংশগ্রহণকারী ছিলেন। বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, ফিলিপিন্স, রোমেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড ও তুরস্ক ছাড়া অন্যত্র সব জায়গায় বয়স, লিঙ্গ, শিক্ষা ও অঞ্চলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাপকাঠির ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ঠিক করা হয়।
ভারত, কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সমীক্ষাটি অনলাইনে করা হয়। ফলে, সেখান থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে সেগুলি সেখানকার তরুণ, ইংরেজি-বলা ব্যক্তিদের সম্পর্কেই প্রযোজ্য, সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জন্য নয়।
সাধারণ ভাবে, বয়স্ক ও অস্বচ্ছল মানুষ কী উপায়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন, অনলাইন সামপেলের মাধ্যমে তার প্রতিফলন তেমন ঘটে না। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে, সংবাদ সংগ্রহের ব্যাপারে অনলাইন মাধ্যমগুলির ব্যবহারই বেশি প্রতিফলিত হয়। অফলাইনের চিরাচরিত প্রথাগুলির প্রতিফলন কম হয়," বলা হয়েছে রিপোর্টটিতে।
ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের ক্ষেত্রে এটা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। কারণ এখানে ইন্টারনেটের প্রসার যথাক্রমে ৫২.৪% ও ৫৮%। উত্তর ও পশ্চিম ইয়োরোপের দেশগুলির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়, কারণ সেখানে ইন্টারনেটের প্রসার প্রায় ৯৫%।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল তামিলনাড়ুর মহিলা দাহ-কর্মী পি জয়ন্তীর ছবি