৩৮ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা 'প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিসটেন্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচুয়েশন ফান্ড' বা 'পিএম কেয়ার্স ফান্ড'এ ২,১০৫ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তথ্য জানার অধিকার আইনে কিছু প্রশ্ন করলে, এই হিসেব পান তাঁরা। শক্তি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী রাস্ট্রায়ত্ত কম্পানিগুলি টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সকলকে টেক্কা দিয়েছে। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী সংস্থা ওএনজিসি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এনটিপিসি যথাক্রমে দিয়েছে ৩০০ ও ২৫০ কোটি টাকা। ওই তথ্য থেকে আরও জানা গেছে যে, বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বা পিএসইউ তাদের সিএসআর বা করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের টাকা, এই আর্থিক বছরের জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ হওয়ার আগেই অনুদান দেওয়ার জন্য তুলে নেয়। এই কোম্পানিগুলির মধ্যে আছে ওএনজিসি ও তেল বিপনন সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল)। এইচপিসিএল-এর মালিকানা আবার ওএনজিসি-রই হাতে রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ৫৫ রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানির কাছে তথ্য জানার অধিকার আইন বা রাইট টু ইনফরমেশন-এর (আরটিআই) অধীনে প্রশ্ন করে। তার মধ্যে ৩৮ টির কাছ থেকে ২৭ মার্চ থেকে ১৩ অগাস্ট সময়সীমা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
এ বছর ২৭ মার্চ চালু হওয়ার পর, ওই তহবিলে কত টাকার অনুদান জমা পড়েছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে, পিএম কেয়ার্স সমালোচনার মুখে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বার বারই বলা হয়েছে যে, ওই তহবিল আরটিআই-এর আওতায় পড়ে না। ফলে, তাতে কত টাকা জমা পড়ল তার প্রকৃত অঙ্কটা জানা যায় না, একটা আনুমানিক হিসেব পাওয়া যাচ্ছিল মাত্র। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রান তহবিল থাকা সত্ত্বেও আলাদা করে এই তহবিল তৈরি করার যৌক্তিকতা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ওঠে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ঘিরে ভারতে রাজনৈতিক তরজা
ওই তহবিলের ওয়েবসাইটে দেখান হয়েছে যে, ২০২০ সালে ওই তহবিল তৈরির ৫ দিনের মধ্যে ৩,০৭৬.৬২ কোটি টাকা জমা পড়ে। তবে যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। বলা হয়েছে, যে টাকা উঠেছে, তার মধ্যে ৩,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকার মধ্যে ২,০০০ কোটি টাকা দিয়ে ৫০,০০০ ভেন্টিলেটার কেনার জন্য; ১,০০০ কোটি টাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যয় করার জন্য; আর ১০০ কোটি টাকা ভ্যাকসিন তৈরি করার খরচ মেটাতে। এই ব্যয়ের কোনও সময়সীমা বাঁধা নেই।
পিএসইউগুলির অনুদানের তালিকা নীচে দেওয়া হল।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল
আরটিআই-এর জবাব থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রায় সব ধরনের পিএসইউ-ই তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর তহবিল থেকে টাকা তুলে পিএম কেয়ার্স-এ জমা করেছে। পিএম কেয়ার্স-এর ওয়েবসাইটে বলা আছে যে, ওই তহবিলে দান করলে, সেই টাকা সিএসআর বলে বিবেচিত হবে এবং তার ওপর ১০০ শতাংশ আয়কর ছাড় পাওয়া যাবে।
ওএনজিসি জানিয়েছে যে, এ বছর সিএসআর-এর টাকা কী কী খাতে খরচ করা হবে তা ঠিক হওয়ার আগেই, ওই তহবিল থেকে টাকা তুলে তারা পিএম কেয়ার্স-এ দিয়েছে। এইচপিসিএল-ও জানিয়েছে যে, এ বছরের সিএসআর-এ ব্যয়ের তালিকা তৈরি হওয়ার আগেই তারা সেখান থেকে ১২০ কোটি টাকা পিএম কেয়ার্স-এ জমা করেছে।
পাওয়ার ফাইন্যান্স করপোরেশন হল এমন একটি পিএসইউ যেটি তার সিএসআর-এর বরাদ্দ অর্থের বেশিই দিয়েছে পিএম কেয়ার্স ফান্ড-এ। এ বছর তাদের সিএসআর তহবিলের জন্য বরাদ্দ হল ১৫০ কোটি টাকার কিছু বেশি, কিন্তু ওই রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানি পিএম কেয়ার্স-এ দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
গত অর্থ বর্ষে এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া তাদের সিএসআর তহবিলের ৮৩.৭৯ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা দেয়্।
কিছু পিএসইউ তাদের গত ও বর্তমান, উভয় আর্থিক বছরের সিএসআর তহবিল থেকে টাকা তুলে জমা করে।
অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড তাদের গত আর্থিক বছরের সিএসআর থেকে দেয় ১৩ কোটি টাকা, আর বর্তমান আর্থিক বছর থেকে দেয় ২৫ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন গত আর্থিক বছরের সিএসআর তহবিল থেকে দেয় ৭০ কোটি টাকা, ও এই আর্থিক বছরে দেয় ১৩০ কোটি টাকা। রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন করপোরেশন তাদের গত আর্থিক বছরের ১৫৬.৬৮ কোটি টাকার সিএসআর তহবিল থেকে দেয় ১০০ কোটি টাকা, আর এই বছরের ১৫২ কোটি টাকার তহবিল থেকে দেয় ৫০ কোটি টাকা।
আরটিআই-এর তথ্য থেকে কিছু পিএসইউ-র কথা জানা গেছে যারা লোকসানে চলার কারণে কোনও অনুদান দিতে পারেনি।
তাদের মধ্যে একটি হল বিএসএনএল। সংস্থাটি স্বীকার করেছে যে, "তারা অর্থ বর্ষ ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ কোনও নিট লাভ করেনি। ফলে, ২০১৫-১৬ থেকে কোনও সিএসআর উদ্যোগ নিতে পারেনি বিএসএনএল।"
স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে, গত তিন বছরে তাদের লাভের অঙ্ক শূন্য। এবং তাদের সিএসআর অন্তর্ভুক্ত চালু প্রকল্পের জন্য ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা আছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট পড়া যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসছেন? জেনে নিন সমস্ত নিয়ম কানুন