রায়গড় পুলিশ মুম্বইয়ের বাসভবন থেকে বুধবার ৪ নভেম্বর, ২০২০ রিপাবলিক টিভির মালিক ও মুখ্য সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে একটি দু'বছর পুরনো আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোস্বামীকে রায়গড় নিয়ে গেছে।
গোস্বামীর সাথে আরও দু'জন ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে, তাঁরা হল ফিরোজ শেখ এবং নিতেশ সারদা। এই দু'জনের নাম আত্মহত্যা করা ইন্টেরিওর ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্ট অন্বয় নাইক ও তাঁর মায়ের সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে। নাইক এবং তাঁর মা—গোস্বামী, শেখ ও সারদার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে যে তাঁদের সংস্থার জন্য করা কাজের পাওনা বকেয়া টাকা মিটিয়ে না দেওয়ার দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মহত্যার ঘটনার পর নায়েকের স্ত্রী অক্ষতা, অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে মামলা রজু করে এবং সোশাল মিডিয়ায় রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে একাধিক ভিডিও পোস্ট করেন।
অন্বয় নাইক কে এবং কি ঘটেছিল?
২০১৮ সালের মে মাসে অন্বয় নাইক এবং তাঁর মা কুমুদ নাইককে আলিবাগে তাঁদের বাসভবনে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অন্বয় ছিল কনকর্ড ডিজাইন প্রাইভেট লিমটেড কোম্পানীর ম্যানাজিং ডিরেক্টর। অন্বয়ের পরিবারে বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ও কন্যা রয়েছে।
এই ঘটনায় তদন্তকারী রায়গড় পুলিশের অনুমান অন্বয় প্রথমে তাঁর মাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে এবং পরে নিজে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ একটি ইংরেজিতে লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পায়, যেখানে অন্বয় তিনটি কোম্পানীর বিবরণ লিপিবদ্ধ করে। এই নোট অনুযায়ী রিপাবলিক থেকে তাঁর ৮৩ লক্ষ টাকা এবং অন্য দুটি ফার্ম থেকে মোট ৪ কোটি ও ৫৫ লক্ষ টাকা বকেয়া ছিল।
আরও পড়ুন: এটি কুয়েতিদের ফরাসি জিনিস বয়কটের ভিডিও নয়
২০১৯ সালের এপ্রিলে, তদন্তকারী স্থানীয় রায়গড় পুলিশ একটি রিপোর্ট জমা করে এবং বলে যে সুইসাইড নোটে উল্লেখ করা অর্ণব গোস্বামী ও অপর দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারপর অন্বয়ের স্ত্রী অক্ষতা ও মেয়ে আদন্যা সোশাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও পোস্ট করে যেখানে তাঁরা মহারাষ্ট্রের ভারতীয় জনতা পার্টি পরিচালিত তৎকালীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, প্রশাসন গোস্বামীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২০২০ সালের মে মাসে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোট রাজ্যে ক্ষমতায় এলে, কংগ্রেস দল টুইটারে অক্ষতার এই ভিডিও শেয়ার করে এবং রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে।
২৬ মে মহারাষ্ট্রের গৃহমন্ত্রী অনিল দেশমুখ এই টুইটকে রিটুইট করেন এবং ঘটানটি নেয় পুনরায় তদন্তের আশ্বাস দেন।
''ঘটনা বিকৃত করা হয়েছে, ৯০ শতাংশ বাকেয়া টাকার মিমাংসা হয়েছে: রিপালবালিক টিভি''
গোস্বামীর বকেয়া টাকা না মেটানো ও নাইকের আত্মহত্যা করা নিয়ে সব ওঠা সব অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করে বিপাবলিক টিভি ৭ মে বিবৃতি দেয়। অক্ষতার সব অভিযোগকে মিথ্যে ও অমূলক আখ্যা দিয়ে রিপাবলিক টিভি বলে কেসটি বন্ধ হয়েছে কারণ অক্ষত "অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি,'' এবং জানায় ৯০ শতাংশ বকেয়া মেটানো হয়ে গেছে। চ্যানেলটি আরও অভিযোগ করে অক্ষতা নাইক ও আদন্য নাইক রিপাবলিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিমাংসা ও চূরান্ত রফার জন্য দেখা করতে অস্বীকার করে। এবং নাইকরা রিপাবলিককে বলে তৃতীয় সংস্থার মাধ্যমে টাকা মেটাতে যা চুক্তি বহির্ভূত ছিল।
চ্যানেলটি আরও অভিযোগ করে কংগ্রেস নেতাদের ভিডিওটি শেয়ার করা রাজনৈতিক দলটির ''স্বাধীনভাবে সংবাদ সংস্থা চালানো'' রিপাবলিকের বিরুদ্ধে একটি 'প্রতিহিংসা পরায়ণ' ব্যবহার। পুরনো বিবৃতিটি পড়ুন এখানে।
গোস্বামীর বুধবারের গ্রেফতারির পর পর চ্যানেলটি তাদের অবস্থান থেকে না সরে বিবৃতিতে জানিয়েছে, "সাজানো আত্মহত্যার ঘটনায় বন্ধ হওয়া কেসে অর্ণব গোস্বামীর এই গ্রেফতারি উদ্দেশ্যপ্রণদিত, অসৎউদ্দেশ্যে এবং রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্যি কথা বলার জন্য চক্রান্তমূলক শাস্তিস্বরূপ।"
এখন কেসটির বর্তমান অবস্থা কী?
মহারাষ্ট্র পুলিশ ৪ নভেম্বর, ২০২০ সুইসাইড নোটে উল্লেখ থাকা তিন ব্যক্তি গোস্বামী, শেখ এবং সারদাকে গ্রেফতার করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কঙ্কন এলাকার ইন্সপেক্টর জেনারেল সঞ্জয় মোহিতকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে লিখেছে, ''অর্ণব গোস্বামীকে এখন রায়গড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁকে তদন্তকারী অফিসার জিঞ্জাসাবাদ করবে সেই মত বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।''
অন্বয়ের স্ত্রী অক্ষতা এবং কন্য অদন্যা একটি সংবাদ সম্মেলন করে রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং দাবি করেছে রিপাবলিকের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবি সঠিক নয়।
এর সঙ্গে কি সম্প্রতি রিপাবলিকের বিরুদ্ধে ওঠা টিআরপি জালিয়াতির যোগ আছে?
না, এই কেসেটি দাখিল হয়েছে রায়গড়ে আর এর তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে রায়গড় পুলিশের স্থানীয় অপরাধদমন বিভাগ। এই কেসের সঙ্গে মুম্বই পুলিশের দায়ের করা রিপাবলিকের বিরুদ্ধে ওঠা টিআরপি বাড়াতে টিভি রেটিং সংস্থার কর্মীদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে কোনও যোগ নেই।
যখন মুম্বই পুলিশের ক্রাইম শাখার একটি টিম গোস্বামীকে গ্রেফতার করতে হাজির হয়, অন্য পুলিশের দলও সহযোগিতা করে তাদের কারণ অভিযুক্তের বাড়ির এলাকা মুম্বই পুলিশের সীমানার বাইরে। তিনজন অভিযুক্ত গোস্বামী, শেখ এবং সারদাকে ওরলি, যোগেশ্বরী এবং কান্দিভালির পুলিশ এবং রায়গড় ও মুম্বই পুলিশের ক্রাইম শাখার দল যৌথভাবে গ্রেফতার করে।
মুম্বই পুলিশের অর্ণব গোস্বামী ও রিপাবলিক টিভির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কেস
মুম্বই পুলিশ, মহারাষ্ট্র সরকার এবং অর্ণব গোস্বামী পরিচালিত রিপালিক টিভির মধ্যে বাকযুদ্ধ, এফআইআর ও আইনি মামলা চলছিল গত কয়েকমাস ধরে। মুম্বই পুলিশ প্রথমে আরও ৫ জন সহ চ্যানেলটির বিরুদ্ধে কেস শুরু করে টাকার বিনিময়ে টিআরপি বৃদ্ধির ব্যাপারে। চ্যানেলটি সব অভিযোগ অস্বীকার করে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে দাবি করে একাধিক মুম্বই পুলিশের আধিকারিকের পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তার ফলে অর্ণব গোস্বামী ও রিপাবলিকের সম্পাদকীয় বিভাগের একাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয় চ্যানেলটি বান্দ্রা স্টেশনের বাইরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং পালঘর জেলায় দুই সাধুর গণপিটুনি সহ শহরের বিভিন্ন ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোয় অভিযুক্ত।
সম্প্রতি, শিব সেনা নেতারা বিধানসভা ও বিধানপরিষদে অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের দুটি প্রস্তাব আনে। বিশয়টি নিয়ে বিস্তারিত বুমের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
আরও পড়ুন: শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের নিয়ে শার্লি এবদোর ভাইরাল কার্টুনটি ভুয়ো