বীরভূমের নানুরে বিজেপি (BJP) প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ধর্ষণ (Rape) করা হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি উত্তাল হয় সোশাল মিডিয়া। বিজেপি এই ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল তোলে তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) দিকে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনার খবর পাওয়া যায়। সোমবার প্রকাশিত আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছেন ১২ জন। বিজেপির তরফে বয়কট করা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বুধবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফেসবুক পোস্টে লেখেন, "বীরভূমের নানুর: গ্রাম গুলোতে তৃণমূল তান্ডব চালাচ্ছে গত দু'দিন ধরে। একাধিক বিজেপি বুথ এজেন্টদের ধর্ষণ এবং একাধিক মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। #PoliticalTerrorism of TMC-Jehadi combo."
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
৩ মে ২০২১ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে বীরভূম জেলার নানুরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দ্বারা তাদের প্রার্থীর দুই মহিলা পোলিং এজেন্ট গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। বহু মহিলা দলীয় কর্মী নিগৃহীত হয়েছে ওই জেলায়।
পরের দিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের তরফে টুইট করে এটিকে ভুয়ো খবর বলে দাবি করে।
সংবাদ মাধ্যমকে বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠি জানান দুই মহিলার গণধর্ষণ ও কিছু মহিলাদের নিগ্রহ করার সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো বার্তাটি তাঁরা যাচাই করে দেখেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের থেকে, তাঁরা এই ধরণের কোনও ঘটনা সম্পর্কে জানেন না। এটি ভুয়ো খবর।
বুমের তরফে এব্যাপারে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
"আমরা পুরো বিষয়টি যাচাই করে দেখেছি। এটা বিজেপির তরফ থেকে শুরু করা একটা ভুয়ো খবর। সারা বীরভূমে এমন কোনও ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেনি। এবিষয়ে সমস্ত প্রমাণ আমার কাছে চলে এসেছে।"
আরও পড়ুন: ওড়িশার ভিডিও ছড়াল পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনা বলে
ঘটনাটির বিষয়ে বিশদে জানতে বুমের তরফ থেকে বিজেপির বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক অতনু চ্যাটার্জির সাথে যোগাযোগ করা হয়। ধর্ষণের এই খবরের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সেটাকে সত্যি ঘটনা বলে জানান।
তিনি বলেন, "ধর্ষণ তো হয়েছে, আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে বহু হিন্দু মহিলাকে তৃণমূল আশ্রিত মুসলিম গুণ্ডারা ধর্ষণ করেছে। অনেকেই লজ্জায় বা ভয়ে সেটা প্রকাশ করতে পারছে না। তাদেরকে গানপয়েন্টের সামনে রাখা হয়েছে। প্রকাশ করলে আক্রান্তদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সময় এলে আমরা এর নিশ্চয়ই জবাব দেব।"
তিনি আরও বলেন, "এর মধ্যে নানুরের সাওদায় এমন একটা ঘটনা ঘটে। নানুরের সর্বত্র হিন্দু মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক চাপে এবিষয়ে তারা কিছু বলতে চাইছে না।"
অতনু চট্টোপাধ্যায়কে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, গণধর্ষণের ঘটনার কারণে কাউকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা গেছে কিনা সেবিষয়ে তাঁর জানা নেই। তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত মহিলা কর্মীরা তাঁদের বাড়িতে নেই। তাঁরা কোথায় রয়েছেন সেবিষয়েও তিনি ধন্দে রয়েছেন বলে দাবি করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে অতনু বুমকে চারজন মহিলার নাম জানান।
৪ মে, ২০২১ তারিখে বিজেপি-র এক মহিলা এজেন্ট তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে সাংবাদিক বৈঠকে গণধর্ষণের খবরটিকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। ওই মহিলার কথাকে হাতিয়ার করে অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একেবারেই ভুয়ো। গোটা ঘটনাটাই বিজেপি-র আইটি সেলের কাজ।
আরও পড়ুন: পিস্তল, তরোয়াল নিয়ে তৃণমূলের বিজয় উৎসব বলে ভাইরাল বিকৃত ভিডিও ক্লিপ