৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২১ সালের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। নরওয়ের অতি দক্ষিণপন্থী প্রোগ্রেস পার্টির সাংসদ ও নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশনের সংসদীয় সভায় নরওয়ের প্রতিনিধি দলের প্রধান খ্রিস্টান টাইব্রিঙ্গ জেড্ডে তাঁকে মনোনীত করেন।
"এটা (মনোনয়ন) ইউএই ও ইজরায়েলের মধ্যে শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য। এই বছরের শুরুর দিকে ইউএই ও ইজরায়েলের মধ্যে এবং সম্প্রতি বাহরিনের রাজতন্ত্রের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা ঐতিহাসিক। ইউএই (ও বাহরিন) কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা তাদের ইজরায়েলকে বয়কট করার নীতি শেষ করে।"
ঘটনাচক্রে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার টাইব্রিঙ্গ জেড্ডে ট্রাম্পকে মনোনীত করলেন। প্রথমবার করেন ২০১৯ সালে। সেবার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপনের জন্য কিম জঙ্গ উন-এর সঙ্গে ট্রাম্পের তিন বার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
ওই পুরস্কার প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের পুনরনির্বাচনের প্রচারকে অনেকটাই উজ্জীবিত করেছে এই মনোনয়ন। কিন্তু যেহেতু মনোনয়ন ও পুরস্কার পাওয়া এক নয়, তাই দেখে নেওয়া যাক কে ওই পুরস্কার পেতে পারেন এবং প্রার্থী নির্বাচনের পদ্ধতিটাই বা কী।
প্রথমে পুরস্কারটি সম্পর্কে জানা যাক নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁদেরই দেওয়া হয় যাঁরা দুই বিবাদমান দলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হন বা মানুষের অবস্থার উন্নতি সাধনে সফল হন। তাঁর উইলে, অ্যালফ্রেড নোবেল বলে দিয়েছিলেন কারা এই পুরস্কার পেতে পারেন:
"এই পুরস্কার তিনিই পাবেন যিনি নানান দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, স্থায়ী সৈন্যবাহিনী তুলে দেওয়া বা কমান ও শান্তি প্রচেষ্টাকে প্রোমোট করার জন্য সবচেয়ে বেশি বা সবচেয়ে ভাল কাজ করেছেন"
১৯০১ সালের পর থেকে, ১০০টি শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১৩৭ প্রাপককে। তার মধ্যে ১০৭ জন ব্যক্তিগতভাবে আর ২৭ টি সংস্থাকে (যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস পেয়েছে তিন বার আর রাষ্ট্রসঙ্ঘের হাইকমিশন ফর রেফিউজিস দু'বার)
এঁদের মধ্যে আছেন বারাক ওবামা, রাষ্ট্রসঙ্ঘ, দালাই লামা, ভারতীয় সমাজ কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী ও ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন। এরিট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত মিটিয়ে ফেলার জন্য ২০১৯ সালে সাম্প্রতিকতম পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যবলি আহমেদ আলিকে।
পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতিটি কী
পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়গুলি:
১) সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে মনোনয়নকারীরা তাঁদের মনোনীত ব্যক্তিদের নাম পাঠাতে পারেন।
২) মার্চ পর্যন্ত মনোনীত ব্যক্তিদের নামের তালিকা থেকে কিছু নাম বেছে নেওয়া হয়।
৩) মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা নামগুলি পর্যালোচনা করে দেখেন।
৪) অক্টোবর মাসে প্রাপক বা প্রাপকদের নাম স্থির করা হয়। ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নাম ঠিক হয়। ভোটের রায়ই চুড়ান্ত। তার বিরুদ্ধে কোনও অ্যাপিল করার সুযোগ নেই।
এই ক্ষেত্রে টাইব্রিঙ্গ জেড্ডে হলেন মনোনয়নকারী যিনি ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন এবং তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন।
কে মনোনীত করতে পারে?
নীচে উল্লেখ-করা ব্যক্তিরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নাম মনোনীত করতে পারেন।
আপনি যদি এই তালিকাভুক্ত হন, তা হলে আপনি মনোনয়নকারী হতে পারেন।
- সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ বা সরকারের সদস্য (ক্যাবিনেটের সদস্য/মন্ত্রী) বা রাষ্ট্রপধান,
- উইমেন্স ইন্টারন্যাশনাল লিগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডম-এর বোর্ডের সদস্য,
- যে সব সংগঠন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে, সেগুলির মূল বোর্ড বা সমতুল্য দপ্তরের সদস্য,
- ইনস্টিটিউট ডি দ্রোয়া ইন্টারন্যাশনাল-এর সদস্য,
- যাঁরা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন,
- নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রাক্তন উপদেষ্টা,
- দ্য হেগ-এ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস ও পারমানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশন-এর সদস্যরা,
ইউনিভারসিটির প্রফেসার, সম্মানীয় অবসরপ্রাপ্ত (এমিরেটাস) প্রফেসার, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, আইন, দর্শন, থিওলজি বা ধর্মতত্ত্ব ও ধর্মের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার, ইউনিভারসিটি রেক্টার, ইউনিভারসিটি ডিরেক্টর (বা সম পদের কেউ), শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিদেশনীতি বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর
নরওয়ের নোবেল কমিটির বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যরা
একজন সাংসদ হওয়ার সুবাদে টাইব্রিঙ্গ-জেড্ডে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করতে পারেন। কাউকে মনোনীত করতে হলে এই
ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন।
এই বছরের পুরস্কারের জন্য ৩১৮টি
মনোনয়ন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ২১১টি হল ব্যক্তি বিশেষের জন্য আর ১০৭টি সংস্থার জন্য। এটা হল সর্বকালের চতুর্থ বৃহত্তম সংখ্যা।
পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হওয়ার জন্য কি কোনও বিশেষ মানদন্ড আছে?
না। মনোনীত করতে পারেন এমন কোনও ব্যক্তির দ্বারা মনোনীত হওয়াই যথেষ্ট। নিজেকে নিজে মনোনীত করা যায় না।
ট্রাম্পের মনোনয়ন কি গুরুত্বপূর্ণ?
এটা বলা শক্ত। কারণ, এ ব্যাপারে যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। কে কাকে মনোনীত করছেন বা কে মনোনীত হয়েছেন, সেই তথ্য ৫০ বছর গোপন রাখা হয়।
"নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ বছরের আগে কোনও মনোনয়ন সংক্রান্ত তথ্য সকলের জন্য বা ব্যক্তিগত গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকাশ করায় বাধা আছে। এই নিষেধ মনোনীত ব্যক্তি, মনোনয়নকারী, মনোনীতদের সম্পর্কে অনুসন্ধান ও মতামত সংক্রান্ত তথ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।