ডাক্তারি পড়ায় আগ্রহী যে সব ছাত্রছাত্রী মেডিক্যাল কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতামূলক নিট পরীক্ষা দেন, তাঁদের মধ্যে শোয়েব আফতাব ও আকাঙ্খা সিংহ দু'জনেই পুরো ৭২০ নম্বর পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। মেডিক্যালের নিট পরীক্ষার ফলাফল ১৬ অক্টোবর ২০২০তে ঘোষণা করা হয়।
আকাঙ্খা সিংহ পরীক্ষা দেন উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর থেকে আর আফতাব ওড়িশার রাউরকেল্লা থেকে। দু'জনেই পুরো ৭২০ নম্বর পেলেও, আফতাব পান প্রথম স্থান ও আকাঙ্খা দ্বিতীয়।
দু'জন পরীক্ষার্থী যদি একই নম্বর পান, তাহলে নিট-এর 'টাই-ব্রেকার' নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের র্যাঙ্ক স্থির করা হয়। এক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মেনেই সিংহকে দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়। একই নম্বর-পাওয়া দুজন পরীক্ষার্থীর স্থান ঠিক করার ক্ষেত্রে যথাক্রমে চারটি বিষয় দেখা হয় – বায়োলজিতে নম্বর, কেমেস্ট্রিতে নম্বর, কে ক'টা ভুল উত্তর লিখেছে এবং সব শেষে, কার বয়স বেশি। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে অনেক সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রশ্ন তোলেন যে, দু'জনেই যখন ৭২০ তে ৭২০ পেয়েছেন, তখন আফতাবকে কেন প্রথম স্থান দেওয়া হল?
চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী ও লেখিকা শেফালী বৈদ্যও টুইটারে একই প্রশ্ন করেন। নিট পরীক্ষার ফলাফল আগে কখনও এতটা দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: শিবরাজ সিংহ চৌহানকে তাক করতে কংগ্রেস একটি মহড়ার ভিডিও ব্যবহার করেছে
নিট-এর টাই ব্রেকারের নিয়ম
নিট পরীক্ষায় স্থান নির্ধারণের ব্যাপারে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি-র (এনটিএ) নীতির চারটি ধাপ আছে।
প্রথমটিতে, একজন পরীক্ষার্থী বায়োলজিতে কত নম্বর পাচ্ছে, তার ওপর জোর দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ১৮০টি প্রশ্নের মধ্যে, ৯০টি থাকে বায়োলজির ওপর এবং ফিজিক্স ও কেমেস্ট্রির ওপর থাকে ৪৫টি করে প্রশ্ন।
যদি দু'জন বা তারও বেশি পরীক্ষার্থী একই নম্বর পান, তাহলে বায়োলজিতে যে বেশি পান, তাঁকেই ওপরে স্থান দেওয়া হয়। যদি দেখা যায় বায়োলজিতে তাঁরা একই নম্বর পেয়েছেন, তাহলে তাঁদের কেমেস্ট্রির নম্বর মিলিয়ে দেখা হয়। তখন কেমেস্ট্রিতে যাঁর নম্বর বেশি থাকে, তিনিই পান ওপরের স্থান।
কিন্তু কেমেস্ট্রিতেও যদি একই নম্বর পান তাঁরা, তাহলে তাঁদের ভুল উত্তরের সংখ্যা গুনে দেখা হয়। যাঁর ভুল কম, তাঁকেই দেওয়া হয় ওপরের র্যাঙ্ক।
এর পরেও যদি দেখা যায় তাঁদের মধ্যে সমতা বজায় থাকছে, তখন তাঁদের বয়স বিবেচনা করা হয়। যার বয়স বেশি, তাঁকেই তখন ওপরে স্থান দেওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে আফতাব ও আকাঙ্খা দু'জনেই 'ফুল মার্কস' বা পুরো নম্বর পান। ফলে চারটির মধ্যে তিনটি বিচার্য বিষয়ে তাঁদের সমতা বজায় ছিল। আর সেই কারণেই তাঁদের বয়স বিচার করা হয়। এনটিএ-এর এক অধিকর্তা পিটিআইকে বলেন, আফতাবের বয়স ১৮। তাই তাঁকে প্রথম স্থান দেওয়া হয়। আর ১৭ বছর বয়সী আকাঙ্খা পায় দ্বিতীয় স্থান। বুম আফতাবের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই টাই-ব্রেকার নীতিটি একমাত্র নিট পরীক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা বা যৌথ প্রবেশিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিয়মটা একটু আলাদা। তিন ধাপে ফলাফল পর্যালোচনা করার পরও যদি দেখা যায় সমতা বজায় থাকছে, তাহলে যাঁরা একই নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের একই র্যাঙ্ক দেওয়া হয়। বয়সটা বিচার্য হয় না।
প্রথমে, পজিটিভ নম্বর মিলিয়ে দেখা হয়। যদি সেখানে সমতা বজায় থাকে, তাহলে মেলান হয় অঙ্কের নম্বর। যদি তাতেও একই নম্বর পেয়ে থাকেন তাঁরা, তখন দেখা হয় তাঁদের ফিজিক্সের নম্বর। তাতেও যদি টাই না ভাঙ্গা যায়, তাহলে ওই পরীক্ষার্থীদের একই স্থান বা র্যাঙ্ক দেওয়া হয়।
নিট ২০২০
নিট ২০২০ দু'বার পেছনর পর শেষমেশ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। কনটেনমেন্ট জোনে বসবাসকারী যে সব পরীক্ষার্থী সেদিন পরীক্ষায় বসতে পারেননি, তাঁদের জন্য ১৪ অক্টোবর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
যে ১৩.৬৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসেন, তাঁদের মধ্যে ৭,৭১,৫০০ পাস করে পরের ধাপে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
আরও পড়ুন: মালদহে নমাজের সময় পুজো মন্ডপের মাইক বন্ধের পুরনো চিঠি ভাইরাল