Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
বিশ্লেষণ

কোভিড পরিস্থিতিতে ভারতে বাবা মা হারাচ্ছে বাচ্চারা, আমরা যা করতে পারি

অতিমারি অনেক শিশুর জীবন নয়ছয় করে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সামনে আসছে ভারতে দত্তক সংক্রান্ত নিয়মের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা।

By - Adrija Bose | 9 May 2021 5:24 AM GMT

করোনাভাইরাস অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ, টুইটারকে হাসপাতালের শয্যা ও অক্সিজেন যোগানের একটা বৃহৎ ডাইরেক্টারিতে পরিণত করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ নম্বরই কাজ করে না। আর স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার জন্য মানুষ যখন হন্নে হয়ে ঘুরছেন, তখন সেই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, একটি টুইটে লেখা হয়, "বাচ্চা বাড়িতে একা। বাবা মারা গেছেন। মা হাসপাতালে ঘোরতর অসুস্থ। পাড়াপড়শিরা দেখাশোনা করতে চাইছে না।"

হাসপাতালগুলি থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য কাতর আবেদনের মধ্যে, অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুদের কথাও উঠে আসছে সোশাল মিডিয়ায়। এরই মধ্যে, সোমবার পর্যন্ত, ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ২ কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায় আর মৃত্যু সংখ্যা ৩,৫০২ ছুঁয়ে যায়। বিগত ১০ দিন ধরে, ভারতে প্রতিদিন ৩,০০,০০০ সংক্রমণ ধরা পড়ে।

অতিমারিতে অনাথ হচ্ছে শিশুরা

কোভিড-১৯'র কারণে হায়দ্রাবাদের একটি শিশু তার দাদু দিদিমাকে হারায়, আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মাকেও। অনেক খোঁজখবর করে তার আত্মীয়দের ফোন করা হলে, তাঁদের কেউই বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হননি। তাঁদের আশঙ্কা ছিল যে, বাচ্চাটি সংক্রমণ ছড়াবে। গত সপ্তাহে, একটি ২০ বছরের মেয়ে ও ১৮ বছরের ছেলের বাবা-মা কোভিড-১৯'এ মারা গেলে, তারা আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করে। দিল্লি পুলিশ একটি সংবাদপত্রকে এ কথা জানায়। ওই ভাই বোনকে উদ্ধার করে, কাউনিসেলিং করার পর, তাদের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দিল্লিতে একটি তিন মাসের শিশু কন্যা ও একটি ৬ মাসের শিশুও এই ভাইরাসের আক্রমণে তাদের মা-বাবাকে হারায়।

অ-সরকারি প্রতিষ্ঠান 'প্রজওয়ালা'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুনীতা কৃষ্ণান, এই ধরনের শিশুদের সন্ধান করে সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন। যৌন-পাচারের শিকার হন যাঁরা, এই সংস্থাটি তাঁদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। "শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত। তাই শিশুদের জন্য সরকারি পরিষেবার অনেক বেশি প্রসার ও উন্নতি প্রয়োজন," বলেন কৃষ্ণান। তাঁর মতে, কেবলমাত্র অনাথ শিশুদেরই সাহায্য প্রয়োজন, এমন নয়। "যদি বাবা ও মা দু'জনকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাহলে বাচ্চাটি কোথায় যাবে?" উনি বলেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে আত্মীয়রা এই বাচ্চাদের স্পর্শ করতেও অস্বীকার করেছে। তাই, "নিভৃতাবাসের এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সব বাচ্চাই সেখানে যেতে পারে," বলেন কৃষ্ণান।

দিল্লির এক বস্তিতে, ৪ ও ৭ ক্লাসে পড়ে এমন দুই বাচ্চা বাড়িতে অবহেলার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারণ, তাদের মা মারা যাওয়ার পর থেকে, তাদের বাবা মানসিক শক-এর মধ্যে রয়েছেন। "কেউ তাঁর বাচ্চাদের দত্তক নেন, এটা তিনি একবারেই চান না। আবার তাদের খাবারের বন্দোবস্তও করছেন না," বলেন সোনাল কাপুর। উনি দিল্লিতে 'প্রৎসাহন' নামের এক এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা ওই বাচ্চা দুটির জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করছেন।

আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা: জখম বাংলাদেশি মহিলার পুরনো ছবি ছড়াল বাংলার বলে

কে তাদের দত্তক নিতে পারে?

এক কম্পানির পেশাদার কর্মী সম্প্রতি টুইট করে তাঁর পাড়ার একটি বাচ্চার জন্য সাহায্যের আবেদন করেন। তিনি বলেন, উনি যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য, সেখানে অনাথ শিশু সংক্রান্ত বার্তার স্রোত বইছে। একটি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে, শিশুদের দত্তক নেওয়ার আবেদন করে অনেক বার্তা পোস্ট করা হয়েছে। কারণ, সেই সব বাচ্চাদর বাবা-মা সংক্রমিত হয়েছেন। ওই পোস্টগুলিতে 'বাচ্চা দত্তক নেওয়ার জন্য' টেলিফোন নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

"এটা বেআইনি," বলেন সৌম্যা। উনি একটি বাচ্চাকে দত্তক নিয়েছেন। দত্তক নেওয়ার একমাত্র উপায় হল, নারী ও শিশু কল্যান মন্ত্রকের অধীনে সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির মাধ্যমে সব নিয়ম কানুন মেনে এগনো।

সোমবার, দিল্লির কমিশন ফর চাইল্ড রাইট প্রোটেকশন (ডিসিপিআর) বা শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপারসন অনুরাগ কুণ্ডু এ ব্যাপারে দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তবকে চিঠি লিখেন। শিশুদের পাচার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ওই ধরনের সোশাল মিডিয়া পোস্টের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হয় পুলিশ কমিশনারকে।

চিঠিতে তিনি পুলিশ কমিশনারকে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, "ডিসিপিআর অনেকগুলি ঘটনার কথা জানতে পেরেছে। দেখা গেছে, যাঁদের কাছে কোনও অনাথ শিশু সম্পর্কে খবর আছে, তাঁরা সোশাল মিডিয়ায় (ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ) সেই সব শিশুদের দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁরা আপডেট পোস্ট করে জানিয়েও দিচ্ছেন যে, কোনও একটি বাচ্চাকে বা বাচ্চাদের দত্তক নেওয়া হয়ে গেছে। আমি নিশিচত যে অনেকেই সরল মনে, বা দত্তক সংক্রান্ত আইন না জেনেই, এমনটা করছেন। কিন্তু এর মধ্যে শিশু পাচার ও ‍শিশু কেনা-বেচার ঘটনাও থাকতে পারে।"

গত সপ্তাহে, স্মৃতি ইরানি বলেন যে, সরকার রজ্যগুলিকে এই মর্মে অনুরোধ করেছে যে, কোভিড-১৯-এর কারণে অনাথ শিশুদের তারা যেন শিশু কল্যান কমিটিগুলির মাধ্যমে দেখাশোনা করে।

পাঁচ দিন আগে, কোভিড-১৯'র কারণে অনাথ হওয়া শিশুদের যাতে সব রকম সাহায্য করা হয়, তার জন্য ডিসিপিসিআর একটি হেল্পলাইন খুলেছে। কোনও অসহায় বাচ্চার কথা জানাতে ৯৩১১৫৫১৩৯৩ নম্বরে ফোন করতে হবে।

ডিসিপিসিআর-এর চেয়ারপারসন বুমকে বলেন যে, সোমবার পর্যন্ত, ওই হেল্পলাইনে সাহায্য চেয়ে ১০২টি ফোন আসে। তিনি বলেন, যে সব বাচ্চার বাবা-মার কেউ একজন বা দু'জনেই মারা গেছেন, যারা পরিত্যক্ত, যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন, যারা হিংসার শিকার হচ্ছে, বা যাদের গর্ভাবস্থায় যত্ন দরকার, তাদের সাহায্য করার জন্যই ওই হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। সেটি ২৪x৭ কাজ করে ও সেটি চালু রাখার জন্য ৫ জন অপারেটারকে নিযুক্ত করা হয়েছে। "প্রয়োজন হলে, আমরা এটিকে আরও জোরদার করব," বলেন কুণ্ডু।

সোশাল মিডিয়ায় দত্তক নেওয়ার আবেদন করা ঠিক কেন 'বিপজ্জনক' বলে মনে করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কুণ্ডু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বিশদে বলেন। তিনি জানান যে, একটি বাচ্চা অনাথ হয়ে গেলে, বা পরিত্যক্ত হলে, বা তার বাবা-মা যদি তার দেখাশোনা করার ব্যাপারে অক্ষম হন, তাহলে যে কেউই সেই বাচ্চাকে শিশু কল্যান কমিটির কাছে নিয়ে যেতে পারে। ওই কমিটি তখন বাচ্চাটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাকে শিশুদের জন্য কোনও একটি হোমে, বা যোগ্য কোনও সংস্থায়, বা স্পেশ্যাল অ্যাডপশন এজেন্সির কাছে (যদি তার বয়স ৬ বছরের কম হয়) পাঠিয়ে দেয়। যখন এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, বাচ্চাটির বাবা-মা তার দায়িত্ব নিতে চাইছেন না, বা নিতে পারছেন না, বা বাচ্চাটি অনাথ হয়ে গেছে ও তার দেখাশোনার জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না, তখন জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট ২০১৫, মডেল রুল ২০১৬, ও দত্তক নেওয়ার নিয়মাবলি অনুযায়ী, তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরই, সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির কাছে একটি বাচ্চাকে নথিভুক্ত করানো হয়। উনি বলেন, "এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না গিয়ে, কোনও বাচ্চাকেই দত্তক নেওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কেউ যদি কোনও বাচ্চাকে নিয়ে যায়, তাহলে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।"

আরও পড়ুন: ৫ কেন্দ্রে পুনর্গণনায় জয়ী বিজেপি দাবিতে ছড়াল ভুয়ো সংবাদের গ্রাফিক

ভারতে দত্তক সঙ্কট

পালিত বাচ্চার মা সৌম্যা তাঁরই মত অন্যান্য মা-বাবার সঙ্গে দত্তক নেওয়ার পদ্ধতিটিকে আরও সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। উনি বলেন, হাজার হাজার দম্পতি দত্তক নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু তাঁদের বলা হচ্ছে, দত্তক নেওয়ার মতো শিশু নেই। অপেক্ষমান দম্পতির সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক শিশু পরিত্যক্ত হচ্ছে। কিন্তু দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে তারা এখনও নথিভুক্ত হয়নি।

"ভারতে দত্তক নেওয়ার পদ্ধতিটা খুব সময়সাপেক্ষ। আর বিগত কয়েক বছরে, প্রতীক্ষার সময়টা আরও বেড়েছে," বলেন সৌম্যা। বেশিরভাগ দম্পতিকে অন্তত দু'বছর অপেক্ষা করতে হয়। কারণ, দত্তক নেওয়ার মতো শিশু নেই স্বীকৃত সংস্থাগুলির কাছে। "একটি পরিত্যক্ত বাচ্চার যখন সুরক্ষার প্রয়োজন হয়, তখন সংস্থাগুলিকে অনুসন্ধান চালাতে হয়। কিন্তু যেহেতু পদ্ধতিটা লম্বা আর প্রতিটি জেলার শিশু কল্যান কমিটিতে খবর নিতে হয়, তাই দত্তক নেওয়ার উপযুক্ত হতে একটি বাচ্চার অনেক সময় লেগে যায়," বলেন সৌম্যা।

একটি বাবা-মা হারা শিশুকে সাহায্য করতে গিয়ে তার সম্পর্কে তথ্য পোস্ট করাটা বিপজ্জনক। "আপনি হয়ত ভাবছেন, আপনি একটা ভাল কাজ করছেন। আপনি যোগ্য বাবা-মার খোঁজ করছেন। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না যে, আইনি ব্যবস্থাটা থাকার একটা কারণ আছে। কাল যদি এক আত্মীয় এসে, তার অধিকার ফলিয়ে, বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়, তাহলে বাচ্চাটির সাঙ্ঘাতিক ক্ষতি হতে পারে," বলেন সৌম্যা। উনি আরও বলেন যে, সিএআরএ'র পদ্ধতিটা দীর্ঘ হলেও, একমাত্র তার মাধমেই দত্তক নেওয়া যেতে পারে।

"আপনি যদি সাহায্য করতে চান, তহলে হেল্পলাইনে ফোন করুন। ওই বাচ্চাদের জন্য সেটাই সবচেয়ে ভাল হবে। কারণ, কঠিন পরিস্থিতে বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা আছে তাদের," বলেন সৌম্যা।

একটি শিশু কল্যান সংস্থায় কাজ করেন নেহা গোয়েল। সংস্থাটির নাম ডাব্লিউএআইসি (হোয়্যার আর ইন্ডিয়াজ চিল্ডরেন বা ভারতের শিশুরা কোথায়)। উনি বলেন, "ভারেত শিশুরা পরিত্যক্ত হয়েই চলেছে, কিন্তু তার হিসেব রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) পরিত্যক্ত বাচ্চার মধ্যে মাত্র ১.৫% বাচ্চা শিশু কল্যান সংস্থাগুলিতে আশ্রয় পায়।" গোয়েল সহ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি গুপ্ত ও বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ পরিত্যক্ত ও অনাথ শিশুদের হিসেব রাখার উপায় বার করার চেষ্টা করছেন।

'প্রোৎসাহন'র সোনাল কাপুর বলেন, ওই সব বাচ্চাদের দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসার কাজটা সহজ নয়। নির্যাতনের ক্ষেত্রে, এবং তা যদি যৌন নির্যাতনও হয়, তাহলে বাচ্চার মা অভিযোগ দায়ের করতে চান না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে, বাবা বা ভাই অপরাধী হলেও, দেখা যায় তারাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। এবং তাঁদের সংস্থা যদি অভিযোগ দায়ের করে, সে ক্ষেত্রে বাচ্চার মা তাকে তার বয়ান বদলাতে বাধ্য করেন। ফলে, নির্যাতন ও হিংসা সহ্য করে এবং অধিকার খুইয়েও বাচ্চাটি তার পরিবারের সঙ্গেই থেকে যেতে বাধ্য হয়।

২০১৬'র ইউনিসেফের রিপোর্টে বলা হয় যে, ভারতে ৩০ মিলিয়ন পরিত্যক্ত ও অনাথ শিশু রয়েছে। কোভিড-১৯'র আগে নানান সংস্থার আশ্রয়ে প্রায় ৪,০০,০০০ শিশু ছিল। তার মধ্যে, আইন অনুযায়ী দত্তকের জন্য নাম নথিভুক্ত করা ছিল ২,০০০ জনের। অনেক আশ্রয় কেন্দ্র দাবি করে যে, তাদের কাছে যে বাচ্চারা থাকে, তাদের সকলেরই মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন আছেন। কিন্তু তার বাইরে সব শিশুর মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন আছেন, এমনটা নয়। আর থেকে থাকলেও, তাঁরা তাঁদের বাচ্চার দেখাশোনা করার মতো ক্ষমতা রাখেন না। সেএসএ'র করা একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে যে বাচ্চারা রয়েছে, তাদের ২২% কে দত্তকের আওতার মধ্যে আনার ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত।

আপনি কী করতে পারেন?

পালিত বাচ্চাদের বাবা-মা, শিশু কল্যান সংস্থাগুলি, সরকারি আধিকারিক ও স্বেচ্ছসেবী সংগঠনগুলি পরিবারহীন বাচ্চাদের ফোন নম্বর ও অন্যান্য তথ্য পোস্ট করার বিরুদ্ধে সাবধান করছেন সকলকে। অতিমারিতে অনাথ হয়ে যাওয়া শিশুদের সন্ধান চেয়ে যে সব টুইট করা হচ্ছে, তাতে সোনাল কাপুর সিংহের নাম বার বার ট্যাগ বা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।

"ইনস্টাগ্রামে আমরা প্রতিদিন ২৫-৩০ টি বার্তা পাচ্ছি," বলেন প্রোৎসাহন-এরর সিইও। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি দারিদ্র, হিংসা ও নির্যাতনের পরিবেশ থেকে উঠে আসা মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সমতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সোনাল বলেছেন, বিপন্ন শিশুদের কথা জানাতে নারী ও শিশু কল্যান মন্ত্রকের 'চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮'-এ (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও নম্বরটি কার্যকরি) অথবা জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে ফোন করা উচিত।

বাচ্চাদের ওপর অতিমারির প্রভাবের কথাও শোনান সোনাল কপূপ। উনি বলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ অতিমারির সময় একটি সমীক্ষায় ৪০০ জন প্রান্তিক কিশোরীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১৯% বলেন যে, বেঁচে থাকার জন্য তারা বা তাদের বড় বোনেরা পরিবারিক আয়ে জোগান দিতে 'মজদুরের' কাজ করছেন। ১৭% মেয়ে বলেন তাঁরা তাঁদের এলাকায় বা নিজেদের পরিবারে বাল্যবিবাহের কথা জানেন। আর ১৩% কিশোরী বাড়িতে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

পশ্চিম দিল্লির একটি বস্তিতে তার পরিবারের সঙ্গে বসবাসকারী একটি মেয়ের ওপর নজর রাখছেন সোনাল। মেয়েটির বাবা কাজ হারানোর পর বাড়িতেই থাকতে শুরু করার পর থেকে, সে তার মেয়ের ওপরই যৌন নির্যাতন চালায়। বেশ কয়েক দফা কাউনসেলিংয়ের পর, মেয়েটির মা একটি কাজ জোগাড় করে। আর বাবা কিছু দিনের জন্য মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা বন্ধ করলেও, মাঝে মাঝে উত্যক্ত করে। "তার বাবা অশোভনভাবে তাকে স্পর্শ করলে, মেয়েটি এখন চিৎকার করে মাকে জাগিয়ে দেয়," বলেন সোনাল কপূর। কিন্তু বাবা-মা কেউই মেয়েকে ছাড়তে চান না। গত সপ্তাহে, মেয়েটির মা সংক্রমিত হন, আর সেই থেকে শয্যাসায়ী হয়ে রয়েছেন।

"তাঁদের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় থাকলেও, তিনি টুইটারে নেই। মেয়েটি কার কাছে সাহায্য চাইবে? কোনও আশ্রয় কেন্দ্রেও সে যেতে চায় না। আমরা সব সময় তার ওপর নজর রাখছি। খাবার আর ওষুধ পৌঁছনোর নাম করে আমরা তার বাড়িতে যাই," বলেন সোনাল কপূর।

১৪ বছরের একটি মেয়ের আত্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকে বলে যে, তাঁরা মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কারণ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মা গত মাসে মারা যান। সমীক্ষাটিতে দেখা যায় যে, পশ্চিম দিল্লির ওই বস্তিতে কেউ না কেউ শর্দি-কাশি আর জ্বরে ভুগছেন। তাঁরা অনেকেই ভাড়া-করা একটি ঘরে পাঁচ সাত জন থাকেন। সেখানে রোগীকে আলাদা করে রাখা বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো জায়গা নেই।

সোনাল বলেন যে, শোকার্ত বা নির্যাতিত শিশুদের যদি তালিকা তৈরি করতে হয়, তাহলে সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। পরিত্যক্ত শিশুদের খাবার দেওয়া আর পরিবারগুলিকে অত্যাবশকীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে সোনাল বলেন, "তথ্য জোগাড় করাটা সরকারের কাজ। সাহায্য করার কাজটা করি আমরা।"

দত্তক সংক্রান্ত ভাইরাল বার্তাগুলি সম্পর্কে সোনাল বলেন, "ভাল করার ইচ্ছে মানেই ভাল কৌশল, তা কিন্তু নয়। এগুলি হল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু এর জন্য কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। সিস্টেমটা ব্যর্থ হয়েছে। আর সরকার যা করতে পারে, সুশীল সমাজ তা করতে পারে না।"

সোনাল কাপুরের এনজিওটি দিল্লিতে অবস্থিত। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক ও ওড়িশার মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও তাঁদের কাছে কেস আসছে। "সব শিশুই অনাথ, এমন নয়। কিন্তু তাদের বাবা-মা তাদের খাওয়াতে পরাতে পারছেন না। এটা কি ভাল? কিন্তু আপনি ওই বাচ্চাদের দত্তক নিতে পারবেন না। সিস্টেম আপনাকে তা করতে দেবে না।"

সাইবার বিশেষজ্ঞ আকাঙ্খা শ্রীবাস্তব একটি হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন চালু করেছেন। কোভিড-১৯'র কারণে কোনও অনাথ হওয়া বাচ্চা সংক্রান্ত তথ্য সেখানে পাঠানো যেতে পারে। কী কী তথ্য পাঠাতে হবে তার একটা তালিকাও দেওয়া হয়েছে - নাম, বয়স, লিঙ্গ, স্থান ও বাচ্চাটির যদি কোনও আত্মীয় বা পরিবারের সদস্য থেকে থাকেন, তাহলে তাঁদের তথ্য। "এই হেল্পলাইনগুলির জন্য কর্মী সংখ্যা ইতিমধ্যেই দু'গুণ করা হয়েছে," বলেন শ্রীবাস্তব।

সুনীতা কৃষ্ণান বলেন, "আমাদের সুরক্ষা পরিষেবা উন্নত করার জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। উনি মনে করেন এই সব শিশুদের জন্য নিভৃতাবাসের ব্যবস্থা করা, হেল্পলাইন নম্বরগুলি সকলকে জানানো ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রচার বাড়ানো জরুরি।

চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর যদি ব্যস্ত থাকে, তাহলে এনসিপিসিআর-এর হেল্পলাইন নম্বর ১৮০০১২১২৮৩০ তে ফোন করা যেতে পারে। তাছাড়া, দেশের প্রতিটি জেলার নিজস্ব ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট (ডিসিপিসিউ) আছে। তাদের নম্বরগুলি পাওয়া যাবে এখানে। প্রতিটি জেলায় অনাথ ও পরিত্যক্ত বাচ্চাদের শনাক্ত করার দায়িত্ব ডিসিপিসিউ-র। এগুলির কোনওটাই যদি কাজ না করে, তাহলে স্টেট অ্যাডপশন রিসোর্স এজেন্সি'র (এসএআরএ) দেওয়া নম্বরগুলিতে ফোন করে জানানো যেতে পারে। তারাই ডিসিপিসিউ ও শিশু কল্যান কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

আরও পড়ুন: শিকেয় কোভিড, ভোট প্রচারে ৪ কোটি ফেসবুকে ব্যয় রাজনৈতিক দলগুলির

ফোন নম্বর পোস্ট করে কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার আবেদন করা থেকে সকলকে বিরত থাকতে বলে, সৌম্যা ও আরও কিছু পালিত শিশুর বাবা-মা একটি ফোন নম্বরের তালিকা বার করেছেন। সেই নম্বরগুলিতে ফোন করে আইনসিদ্ধভাবে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।

Related Stories